১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজ্যের সব হাসপাতালে ভেঙে দেওয়া হল রোগী কল্যাণ সমিতি, ডাক্তারদের মঞ্চেই ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই আবহে শনিবার স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করলেন। পাশাপাশি রাজ্যের সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ারও ঘোষণা করলেন।

গত মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে পাঁচ দফা দাবিতে অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মাঝে তিন দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা ভেস্তে যায়। শনিবার মমতা নিজেই চলে গেলেন অবস্থান মঞ্চে। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিচ্ছি।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকেও এই রোগী কল্যাণ সমিতি নিয়ে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রতিটি হাসপাতালের ক্ষেত্রে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অধ্যক্ষকেই রাখা হোক। এমনিতে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে বসেন স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদ। আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা আরও প্রস্তাব দেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে এক জন সিনিয়র ডাক্তার, এক জন জুনিয়র ডাক্তার, এক জন সিস্টার, স্থানীয় বিধায়ক এবং স্থানীয় থানার আইসিকে সমিতিতে রাখা হোক। এ বার সেই রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলেন।

‘মুখ্যমন্ত্রী নয়, আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি, সব দাবি বিচার করব’, মমতা আচমকা ডাক্তারদের মঞ্চে

মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন, সাধুবাদ জানাচ্ছি! তবে পাঁচ দফা দাবি নিয়েই আলোচনা চাই, বললেন জুনিয়র ডাক্তারেরা

গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে। ওই দিন থেকে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। এই আবহে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে-সহ রাজ্যের সব সরকার হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। সেই ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে ‘দাদাগিরি’-র অভিযোগ তুলেছেন। ‘দাদাগিরি’-তে অভিযুক্ত চিকিৎসক অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করেছে আইএমএ (ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন)। সরকারি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির দিকেও আঙুল উঠেছে। এ বার তা ভেঙে দিলেন মমতা।

রোগী কল্যাণ সমিতি আসলে কী? এই সমিতির সদস্য ট্রাস্টিরা হাসপাতাল পরিচালনের বিষয়টি দেখেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (সাংসদ বা বিধায়ক), স্থানীয় সরকারি আধিকারিক, স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য, বিশিষ্টজনেদের নিয়ে তৈরি হয় সমিতি। সমিতিতে থাকেন আইএমএ-র সদস্যও। হাসপাতাল সঠিক ভাবে পরিচালনের জন্য তহবিলের টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এই সমিতি। এই সমিতির কাজ নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। বাম আমলেও এই সমিতির কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। এখন আন্দোনকারীদের দাবি, সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। হাসপাতালের তহবিলের টাকা নয়ছয়েরও অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই শনিবার এই সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ