প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তিরই আশা জান্নাতে যাওয়া। তাই মুমিন ব্যক্তি সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করেন। জান্নাত লাভের আশায় দুনিয়ার জীবনের কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করেন। জান্নাতের অগণিত নেয়ামত মানুষকে পৃথিবীর সব দুঃখ, দুর্দশার কথা ভুলিয়ে দেবে।
জান্নাত এমন একটি জায়গা যেখানে শুধু সুখ আর শান্তি। সেখানে কোনো পাপ নেই, দুনিয়ার জীবনের মতো কোনো কষ্ট নেই। জান্নাতে মানুষে চিরসুখে বসবাস করবে। সেখানে সে এমন এমন নেয়ামত ভোগ করবে যা সে দুনিয়ার জীবনে চোখেও দেখে নি। দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের নেয়ামতের ধারণাও মানুষ করতে পারবে না।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদী। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোনো ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটাই তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবে।
তবে জান্নাত লাভের পথটি এতো সহজ নয়। মুমিনের কাঙ্খিত জান্নাত লাভের পথে সব থেকে বড় অন্তরায় হলো অভিশপ্ত শয়তান। সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই শয়তান মানুষকে প্রতি মুর্হুতে বিপথগামী করার শপথ নিয়েছে।
শয়তান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা হিজরের ৩৯ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সে (ইবলিস) বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের (মানুষ) সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। আপনার মনোনীত বান্দাদের ছাড়া। (তাদের কোনো ক্ষতি আমি করতে পারব না)।’
আর শয়তান মানুষকে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে অন্যতম হলো, জবান (মুখ) ও লজ্জাস্থান। মানুষ মুখ দিয়ে হঠাৎ এমন কথা বলে ফেলে যা তার নিজের অজান্তেই শিরক হয়ে যায়। আবার মানুষের মুখের কথার মাধ্যমেই অন্যের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা এবং অনেক বিতর্ক ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মানুষের যে অঙ্গগুলোর মাধ্যমে সব থেকে বেশি গুনাহ সংঘটিত হয়ে থাকে তার মধ্যে জবান (মুখ) ও লজ্জাস্থানকে অন্যতম বলেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একই সঙ্গে এই দুই অঙ্গের সঠিক ও সংযত ব্যবহারের মাধ্যমে জান্নাতেরও নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দুটি এমন আছে, যেগুলো মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি: ২০০৪)
অন্য একটি হাদিসের বর্ণনায়, হজরত সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার। (বোখারি: ৬৪৭৪)।
এ সম্পর্কিত আরেকটি হাদিস হলো, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। (বুখারি: ৬৪৭৫)।
পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুনের ৫ নম্বর আয়াতে লজ্জাস্থানের হেফাজত সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনগণ, আর যারা তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষিত রাখে।’