১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুদ্ধের আগের চেয়ে ইউরোপে বেশি তেল পাঠাচ্ছে রাশিয়া

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা একমত হয়েছেন গত ৩১ মে। ফলে সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে ইউরোপে তেল আমদানি আপাতত বন্ধ। তবে হাঙ্গেরির আপত্তির কারণে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল ইউরোপে আমদানি অব্যাহত রয়েছে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে এই ব্লকে রাশিয়ার তেল সরবরাহ আরও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এর পরিমাণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। আর্গাস মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দৈনিক সাত লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল থেকে আট লাখ ৫৭ হাজার ব্যারেল তেল সরবরাহ হয়েছে ইউরোপে।

নিষেধাজ্ঞা শুধু সমুদ্রজাত অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ফলে ৭৫ শতাংশ সরবরাহ কমে যাবে এতে। তবে হাঙ্গেরির মস্কোর ওপর তেল নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বেঁকে বসেছে। ফলে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে। এসব দেশের তেল শোধনাগারগুলো সস্তায় রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ছিনিয়ে নিচ্ছে যা বেশিরভাগ পশ্চিমা ক্রেতারা এড়িয়ে চলছেন।

দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে (‘বন্ধুত্বের জন্য রাশিয়া’) চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার শোধনাগারে তেল সরবরাহ হচ্ছে। জার্মানি ও পোল্যান্ড, এই দুই বৃহত্তম ক্রেতা, বছরের শেষ নাগাদ পাইপলাইনের মাধ্যমে সংযোগ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। এটি কার্যকর হলে ৯০ শতাংশ সরবরাহ বন্ধের আওতায় চলে আসবে।

তবে কবে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে তেল অন্য কোনো উৎস থেকে আমদানি জটিল ও ব্যয়বহুল হবে। যেখানে ২০২১ সালের নভেম্বরে দেখা যায় যে, রাশিয়ার ৯২ শতাংশ তেল সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল স্লোভাকিয়া আর হাঙ্গেরিতে সরবরাহ হয় ৬৫ শতাংশ। উভয় দেশই দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে তেল নেয়।

জার্মানি, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ। কিন্তু এই দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একমাত্র জার্মানি আমদানি কমিয়েছে। জানুয়ারিতে এটি দ্রুজবা থেকে তেলের অর্ধেক পেয়েছে এবং এপ্রিলের মধ্যে পেয়েছে মাত্র এক তৃতীয়াংশ।

হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড রাশিয়ার আমদানি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়েছে। তেল সরবরাহে শোধনাগারগুলো আর্থিক প্রণোদনাও পায়নি। ইউরাল ক্রুড আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কের অনেক নিচে লেনদেন করছে। আর্গাস মিডিয়ার তথ্য বলছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানিকারকরা গত মাসে উত্তর সাগরের তেলের তুলনায় ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলার পর্যন্ত ছাড়ে তেল কিনতে পেরেছে।

আমদানি করা দেশের সরকারগুলো তাদের অবস্থানেই অনঢ় থাকবে। চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া বলে যে তারা দ্রুজবার মাধ্যমে আমদানির ওপর চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে। তবে দুই থেকে তিন বছর সময় চায় তারা। হাঙ্গেরি আরও বড় বাধা এক্ষেত্রে। হাঙ্গেরিয়ান তেল ও গ্যাস কোম্পানি মোল গ্রুপ এর আগে বলেছিল যে এটি ক্রোয়েশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনবে। কিন্তু এখন বলছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে সময় লাগবে চার বছর।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী, ভিক্টর অরবানের রাশিয়ান তেল আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মতামত প্রত্যাহার করার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এটি তার দেশের অর্থনীতিতে একটি ‘পারমাণবিক বোমা’ নিক্ষেপের মতো অবস্থা তৈরি করবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যতে তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে। তেল সরবরাহ ইস্যু বন্ধুত্ব টেকার ক্ষেত্রে কতটা কাজে দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

 

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ