[english_date]

যখন-তখন বিদেশে উড়াল দেয়ার দিন শেষ হচ্ছে এমপিদের

ইচ্ছে হলেই যখন-তখন বিদেশে উড়াল দেয়ার দিন শেষ হচ্ছে এমপিদের। শেষ হচ্ছে যতদিন ইচ্ছে দেশের বাইরে থাকা। এখন থেকে একজন এমপি সরকারি খরচে বছরে দুই থেকে তিনবার বিদেশ সফর এবং সর্বোচ্চ ১০ দিনের বেশি দেশের বাইরে থাকতে পারবেন না। সরকারি টাকার অপব্যবহার রোধ এবং এমপিদের বিদেশ সফরে সমন্বয় আনতে নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ এখন প্রক্রিয়াধীন। এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত ঈদুল আজহার আগেই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে লিখিত প্রস্তাবের আলোকেই নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। নতুন এই নীতিমালায় এমপি এবং সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সফরের প্রয়োজনীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে সংসদ সচিবালয়ের দেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। অবশ্য এজন্য সংসদ সচিবালয়কে প্রয়াজনীয় অর্থ বরাদ্দেরও বিধান থাকছে। আগে দেশ এবং বিদেশ ভ্রমণের খরচ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাহ করত।
সংসদ সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিটি ১৬ সেপ্টেম্বর স্পিকারের দফতরে পৌঁছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে এটি সংসদ সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন স্পিকার। এর আগে একই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও একটি চিঠি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা ওই চিঠির একটি কপি স্পিকারকেও সংযুক্ত করে দেয়া হয়।
অর্থমন্ত্রীর পাঠানো ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমপিদের বিদেশ সফরের অর্থছাড় করার ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিদেশ সফরের জন্য সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে টাকা বরাদ্দের     জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়। চিঠিতে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি সংসদ সচিবালয়ের মাধ্যমে সমন্বয় ও অর্থছাড় করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশে সরকারি খরচে এমপিদের সফর নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, স্পিকারের নির্দেশ পেয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রস্তাবনা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ফাইন্যান্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফাকে। অর্থমন্ত্রীর চিঠির আলোকেই প্রস্তাবনা তৈরি করে তিনি স্পিকারের দফতরে জমা দেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিদেশ সফর নিয়ে চলমান দশম সংসদের শুরু থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। নানা অজুহাতে স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই এক বা একাধিকবার বিদেশ সফরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ সফরের পরে দেশে ফিরে কমিটি সদস্যদের রিপোর্ট করা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়ে তাদের সুপারিশ বা পরামর্শ দেয়ার কথা। কিন্তু চলমান সংসদের সদস্যদের সফর থেকে ফিরে কার্যকর কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ দেয়ার নজির নেই। ফলে এসব সফরে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ কারণেই সরকারি সফরের ক্ষেত্রে নতুন এই নীতিমালাটি করা হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভারতের লোকসভা ও যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটেও এমপিদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এসব অভিজ্ঞতাকে অনুসরণ করেই সংসদ সচিবালয় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে একজন এমপি সরকারি খরচে বছরে দুই থেকে তিনবার সফর এবং সর্বোচ্চ ১০ দিনের বেশি দেশের বাইরে থাকতে পারবেন না। শুধু বিদেশে নয়, দেশের মধ্যেও সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে এমপিদের পরিদর্শন বা সফরে খরচের টাকা আর মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হবে না। সংসদ সচিবালয়ের কমিটি সাপোর্ট (সিএস) উইং থেকেই অর্থ সরবরাহ করা হবে। এজন্য সংসদ সচিবালয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও পাবে। এতে একদিকে অপ্রয়োজনীয় সফর রোধ হবে অন্যদিকে মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতা পাওয়ার আশায় তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি দেখেও আর না দেখার ভান করতে হবে না। কমিটিগুলো স্বাধীন ও শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে পারবে বলেও মনে করেন তারা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ