[english_date]

মোসাদ ইস্যুতে বিএনপি আওয়ামীলীগ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য: সত্য আসলে কী !

বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির এক নেতার সম্পর্ক এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের ঘটনায় দলের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীই মনে করছেন একটি মহলের অপতৎপরতায় এ ধরনের ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছে। সঠিক ও কঠোরভাবে এ ঘটনা মোকাবিলা না করলে দল বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলেও তারা মনে করছেন।

এ ঘটনার বিষয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, মোসাদ পৃথিবীজুড়ে একটি শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা সংস্থার নাম। এরকম একটি দুর্ধর্ষ সংস্থার সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় সারির এক নেতা বৈঠক করবেন আর সেই বৈঠকের ছবি ফেসবুক আর সংবাদমাধ্যমে আসবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। গোয়েন্দা সংস্থা কার্যক্রম যদি প্রচারণায় আসে তাহলে বুঝতে হবে সেটা কোনো গোয়েন্দাগিরি নয়। আর মোসাদের মতো এত শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা এরকম ভুল কখনোই করবে না।

 কথিত মোসাদের সঙ্গে বিএনপির সদ্য যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরীর বৈঠক ও ছবিসহ সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে তার এলাকার ব্যবসায়ী তামান্না চৌধুরী বলেন, আসলাম চৌধুরী একজন ব্যবসায়ী। তিনি শিপ-ব্রেকিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর এ কথাটি সত্য- সারা বিশ্বে অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে এই লৌহজাত ব্যবসাতেও ইসরাইলিদের একক আধিপত্য। সেই ব্যবসার অংশ হিসেবেই হয়তো তাদের মধ্যে কোনো বৈঠক হতে পারে।

অপরদিকে বিএনপির অপর একটি অংশের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সম্প্রতি ঘোষিত কমিটিতে তাকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এত দ্রুত পদ-পদবি বাগিয়ে নেয়ার ঘটনাকে অনেকেই সহজভাবে দেখছেন না। এর পাশাপাশি এলাকার ইউপি নির্বাচনে তার অযাচিত প্রভাব ও হস্তক্ষেপের অনেক অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়কে আড়াল করার জন্যই তিনি এখন বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার নিরলস প্রচেষ্টা ও ভিনদেশি গোয়েন্দা সংস্থার গল্প তৈরি করছেন। এর আগেও বিএনপিতে এমন উদ্ভট সব ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে নিবেদিত নেতা আখ্যা পেয়েছেন বলে তিনিও এমনটা করতে পারেন।

তবে দলের হাইকমান্ড মনে করছে, পৃথিবীর এই একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ফিলিস্তিন ইস্যুতে এ অবস্থা চলে আসছে জন্মলগ্ন থেকে। এটা অনেকটা ধর্মীয় বিষয়। তাই এই ইস্যুকে সামনে এনে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা হতে পারে।

এ সব বিষয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার কাজ গোপনীয়তা রক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করা। যা কখনো ছবি প্রকাশের মাধ্যমে হয় না। এমনকি তারা কখনো নিজের পরিচয়ও দেয় না। সম্প্রতি যে ঘটনা আমি শুনেছি তা আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে, বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন, আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না।

ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ অবৈধ সরকার উৎখাতে প্রস্তুত জনগণ। এজন্য বিএনপির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন নেই।

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পতন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই, তারা যে কোনো সময় ঝড়ে পড়বে। এ অবৈধ সরকার উৎখাতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি জনগণকে নিয়েই রাজনীতি করে। তাই বিদেশে গিয়ে বিএনপি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের করছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা-মোসাদকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম  বলেন, খালেদা জিয়া; যিনি একাধিকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তান তার হয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে ওকালতি করছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের মুখোশ আগেই উন্মোচিত হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, তারা (বিএনপি) ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় গেলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। এটা যে কতো বড় অপরাধ! আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে এসব সাক্ষ্য প্রমাণকে এক জায়গায় করে বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার আদৌ আছে কিনা। নৈতিক অধিকারের বাইরে গিয়ে বলবো, তাদের কোনো অধিকারই নেই। কারণ, তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সেই উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমান রাজনীতি প্রমাণ করে বিএনপি-জামায়াতের ওপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা নেই। আর বিএনপির এসব কর্মকান্ড প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদেরও আস্থা বা বিশ্বাস নেই। তাদের ভবিষ্যত এদেশের মানুষের ওপর নির্ভর করছে না। তারা মনে করছে, তাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সেইসব রাষ্ট্রের ওপর যাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, কেউ যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করলে, সেটা মোটেও অযৌক্তিক হবে না,’ বলেন তিনি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের প্রমাণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে। যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। তবে এসব চক্রান্তে বিএনপি জামায়াত অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

ইসরায়েল-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ কারণে (বিএনপির সঙ্গে বৈঠক) ইসরায়েলের কাছে ধরনা দেওয়ার কিছু নেই। ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে মানুষ হত্যা করছে। প্যালেস্টাইনকে দখল করে রেখেছে। সেখানকার মানুষকে নাগরিক অধিকার দিচ্ছে না। আমরা সবসময় একটা স্বাধীন সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র দেখতে চাই। সেখানে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের এনগেজমেন্টে (সম্পর্কে) যাওয়ার চিন্তাই করি না আমরা।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের পরে পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেয় খালেদা জিয়া ও তার দলের পক্ষ থেকেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া আসলে বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের গুপ্তচর ছিলেন, ঠিক তেমনি বেগম জিয়াও পাকিস্তানের গুপ্তচর। গতকাল মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছেন। তিনি দেশে বসে পাকিস্তানের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত থাকেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে বেগম জিয়া নিয়মিত মাসোহারা পান। অন্য কোনো দেশ হলে খালেদা জিয়া এতদিনে রাজনীতি করার যোগ্যতা হারাতেন। তাই আমি সরকারকে অনুরোধ জানাবো অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ