চাঁদের সোয়ারি
জললগ্ন মেঘের ভেতর চিল উড়ে যায়–অবসন্ন হাওয়ায় চেপে ফিরে আসে
ঘরে সন্ধ্যার সারস; নেয়ে ওই নদী পারে একা সুর বাঁধে।
কেউ নেই জলের ভেতর–নড়ে না চড়ে না মাছ হাঙর কাছিম;
কখনো থাকে না কেউ মাটির ওপর–মুখোমুখি বসে না
সে ঘাসের জাজিমে–তক্তপোশে ; হেমন্তে নাড়ার ধোঁয়া ধূসর উঠোন।
সবুজ ফড়িঙ পাখা মেলে উড়ে গেলে ডানার সুবাস শুঁকে পেছনে
পেছনে ছোটে ছাইরঙা ফিঙে।
কেউ নেই–কখনো থাকে না কেউ–চাঁদ ডুবে গেলে মেঘের উনুন কাঁদে;
ধীরে ধীরে তারারাও ঝরে পড়ে–ধ্যানমগ্ন ধলা বক রাতের প্রহর
গোনে–আঁধারে আলোর ছায়া রাত ভর নাচে–কেউ তা দেখে না।
অথই আন্ধারে একা জাগে চাঁদের সোয়ারি।
২৯.১২.২০১৫
যুগল জোছনা
মোমের পাথরে ফোটে সফেদ জোছনা ফুল;
দুরন্ত জোয়ারে নদী বহমান–কোমল মাটির দলা–জলের ভেতরে জ্বলে রোদের পিদিম;
স্বর্গের দরোজা ভেঙে ছুটে চলে অযুত আদম সবুজ উদ্যান জুড়ে গন্ধমের ঘ্রাণ,টিলার
চূড়োয় পাকে কিসমিশ দানা; রমণের আরাধনা ধামে পৃথিবীর তাবৎ কবি ইউসুফের
মতো গেয়ে যায় প্রণয়ের গান, হিরন্ময় স্বপ্ন দুলে ওঠে দুচোখের দাওয়ায়।
মাটির উষ্ণতা হাসে মধ্যাহ্নের ঘোরে–মর্মরে দোতারা বেজে চলে–অপরাহ্ণের
হলুদ খাম মেঘে ভিজে যায়; পরিযায়ী মেঘপাখি অধরে বিভ্রম মেখে উড়ে যায়
দূরে–অন্ধকারে, মোকামে–মৈনাকে।
মোমের পাথর গলে যমজআপেল–আলোর অপেরা বাজে।
২৭.১২.২০১৫
মুখগুলো মৃত
ঘোর অন্ধকারে মৃত মানুষগুলো জেগে আছে–
সকালে দুপুরে রাতে মৃত মুখগুলো হেঁটে যায়, কখনো গাড়িতে চড়ে, ওড়ে এ্যারোপ্লেনে;
নৌকো আর জাহাজেও চড়ে–যায় অফিস পাড়ায়;
দেবদারু গাছ, উড়ন্ত কাকের সারি মুখগুলো দেখে করুণায় হাসে।
অ্যাকোরিয়ামে রঙিন মাছ সহসা কানকো মেলে বলে ওঠে–আমাদের বেঁধে রেখেছো,
তোমরা তো মরে গেছো কতো শতাব্দী আগে;
তোমরা তো পঁচে গেছো প্রেম আর দয়া পৃথিবীতে থেকে বিদায় নেবার
সাথে সাথে–মুখ ফুটে বলে ওঠে বিমর্ষ বনসাই।
মৃত মুখগুলো হেঁটে যায়–স্বপ্নখের এক ফালি চাঁদ এখনো যে ঝুলে আছে!
সবুজ অরণ্য অভিমুখে কয়েকটি কাক উড়ে যায়–সমুদ্রে চিমনি পোড়ে–
চারপাশে মানুষের মুখগুলো মৃত।
০৫.০১.২০১৬
চিমনির মুখ
রাতচরা জোনি পোকা জ্বলে আঁধারের পদতলে, আঙুলে থুতনি চেপে
হাত মুঠো করে নাকমুখ চেপে ধরে আনমনা আসমান;
রবি ও রুমির মুখোমুখি বসে নেরুদা ও মারকেজের কথা ভাবি–তারপর
রাত ভর মোনাজাত, কাসিদা–কিরাত; শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা। আমি ঘেমে যাই–
নেয়ে নেয়ে অবসন্ন হয়ে ওঠি, মাথার ওপর বাড়ে সিলিং ফ্যানের গতি–র্যাঁবোর
ওপর মুখ গুঁজে বেখেয়ালে তন্দ্রাঘোরে ঢলে পড়ি।
লায়লার তরজমা আর তাহকিক ভুলে যাই; কোথায় সে? মোরগের লালঝুটি ঠিকই
সূর্যের মতো জ্বলে –শবনম নামে; অন্ধ এক ভোর আজানের বেশ আগেভাগে
আমাকে আঁধারে তাড়া করেছিল।
কার্তিক এসেছে ওই ধান বনে, মনে মনে দরজায় জানালায় অলিন্দে
উঠোনে–শুকনো পাতারা ওড়ে, নিভে যেতে চায় দ্রুত তিনটা বিশের
মেঘ, কোহালিয়া চর।
দক্ষিণে বাড়তে থাকে আঁধারে পাতানো ছায়া; চিমনির মুখগুলো কখনো নেভে না।
৩০.১০.২০১৫
নূপুর
বেদনার মতো বেজে যাই রোজ সকাল দুপুর
রিনিঝিনি রুপোর নূপুর
মন ভরে স্নান ঘরে প্রত্যহ তোমাকে দেখি,
তোমার স্বেদের কণা রাত দিন সারা গায়ে মাখি;
তুমি তা জানো না আর
দেখেও দেখো না–হে অবোধ হিরামন পাখি!
আমাকে বেঁধেছো তুমি
পরম আদরে দুটো রাঙা পায়ে–এই বেশ আছি,
দরজাটা বাঁধো সোনা,
জোছনাজোয়ান রাত–রুমালে বেঁধেছি চোখ
খেলি কানামাছি।
১০.১০.২০১৫
সাঁকো
যখন জলের কাছে যাাই–জলের আঁতশি কাচে-বুদবুদে ঘোরে এক মুখ
তবে কি আমিও জল? না কি এই টলটলে হাওরে জলজ সহোদর?
আমার ভেতরে তুমি মাঘের হিমের গায়ে আমরা লুকিয়ে থাকি, ভোরের
কুয়াশা ঘিরে মদির উষ্ণতা! দুনিয়ার দীর্ঘতর ঘুম তোমার আমার।
আগুনের কাছে গেলে থাকো তুমি পাশে–লকলকে শিখা তুমি ডাকো
আয় আয়–আলোয় আড়ালে নাচে অতল আঁধার;
ডেকে ডেকে এই তুমি কোন দিকে নেবে?
একাকী আমাকে রেখে কোন দিকে যাবে?
যখন ঘুমুতে যাই রাতের কোমল বুক মায়ের আদরে ডাকে–এই বুকে
রূপ নাচে ছায়া কাঁপে আড়ালে-অন্তরালে;
প্রত্যহ তোমাকে আমি কতো নামে ডাকি! তোমার ডানায় হাসে
এক অরূপ আলোর সাঁকো।
১৫.১২.২০১৫
Posted by earthnews24 on Friday, January 8, 2016