মিশরের চার হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে দেয়া ধৃষ্টতাপূর্ণ মৃত্যুদণ্ড রায় আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেন অবৈধ সরকারের আজ্ঞাবহ আদালত।
মঙ্গলবার বিচারক শাবান এল শামীর কায়রোর একটি আদালত এ আদেশ দেন।
এরআগে মঙ্গলবার মুরসি ও তার ১০৫ জন সমর্থকের বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তার সমর্থকরা সামরিক শাসকের পতন চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
গত ১৬ মে স্থানীয় সময় শনিবার গুপ্তচরবৃত্তি এবং কারাভঙ্গের অভিযোগে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ সাজা ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর মুরসির বিরুদ্ধে পরপর দুটি মামলায় সাজা ঘোষণা করলো আদালত।
শনিবার একটি মামলায় মোহাম্মদ মুরসি ছাড়াও ফিলিস্তিনের গাজার শাসক দল হামাস ও লেবাননভিত্তিক শিয়া মুসলমানদের সংগঠন হিজবুল্লাহর সদস্যসহ ১৩০ জনের বিচার হয়।
তাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকবিরোধী অভ্যুত্থানের সময় কারাগার থেকে পলায়ন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওই ১৩০ জনের মধ্যে মুরসিসহ ২৭ জন বর্তমানে কারাভোগ করছেন। বাকিদের মধ্যে কাতারভিত্তিক ইসলামী চিন্তাবিদ ইউসুফ আল-কারজাভিও রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতেই বিচারকাজ চলছে।
২০১১ সালের জানুয়ারি মিশরের স্বৈরশাসক হুসনি মোবারকের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতস্ফূর্ত গণ অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন মুরসি।
এক বছরের মাথায় সৌদি আরব, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তে কথিত বিক্ষোভ দেখিয়ে মুরসিকে অপহরণ করে দেশটির সেনাবাহিনী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বল্পমেয়াদী একটা পর্বকে সামনে রেখে সাজানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মিশরের ক্ষমতা দখল করেন বহু বিরোধীকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত ‘নব্য ফেরাউন’ খ্যাত সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
এক নজরে মুরসি:
মিসরের গনতন্ত্রের পথপ্রদর্শক ১৯৫১ সালের ২০ আগষ্ট মিশরে জন্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ মুরসি। তার পুরো নাম মুহাম্মাদ মুরসি ইসা আল-আইয়াত। তার স্ত্রীর নাম নাজলা মাহমুদ। এই দম্পতির পাঁচ জন সন্তান রয়েছেন।
মুরসি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তারপর ৮৫ সালে আবারো মিশরে ফিরে আসেন জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে।
মুরসি রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করেন তারও অনেক পরে। ২০০০-থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পার্লামেন্টে মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। মুরসি ব্রাদারহুড দলটির উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
২০১১ সালে ব্রাদারহুডের অর্থায়নে পরিচালিত ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির প্রধান হন মুরসি।
তবে এই মিসরীয়র ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় পরের বছরের শুরুতে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জন্য ব্রাদ্রাহুডের প্রার্থী খায়রাত আল শাতেরকে অযোগ্য ঘোষনার পরই সামনে চলে আসেন মুরসি।
২০১২ সালে জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও স্বৈরশাসনের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে বহাল রাখার মত চূড়ান্ত ভুলের খেসারত হিসেবে ২০১৩ সালে তিনি অপহৃত হন এবং সেনা বাহিনী ক্ষমতা দখল করে।
তবে বিশ্বের বহু মানুষ এখনো মুরসিকে মিশরের প্রেসিডেন্ট মনে করে।