বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করার পটভূমিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক অ্যাকশন শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ইউরোপ সফরে আমন্ত্রণ না জানানোর এবং সব ধরনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে তারা। গতকাল সোমবার লুক্সেমবার্গে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা বলছেন, ইইউ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা ‘টার্গেটেড স্যাংশানস’ অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা। কারণ রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে মূল ভূমিকা পালন করছে সামরিক বাহিনী। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক জান্তার অধীনে থাকা মিয়ানমারে আজও সামরিক বাহিনী অত্যন্ত প্রভাবশালী। তবে দেরিতে হলেও বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে পশ্চিমারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারকে প্রতিশ্রুত ২০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা ঋণ আটকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি ওই ঋণের অর্থ ছাড়ের জন্য মিয়ানমারকে পরিস্থিতি উন্নতির শর্ত দিয়েছে।
আর মিয়ানমারের আপত্তি উপেক্ষা করে বিশ্বের ১৭৩টি দেশের পার্লামেন্টের ফোরাম ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট ‘জরুরি ইস্যু’ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে গত রবিবার রাতে বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত প্রস্তাব সর্বোচ্চ ভোটে (এক হাজার ৪৭) গৃহীত হয়। আইপিইউ সম্মেলনের রীতি অনুযায়ী, জরুরি ইস্যুতে সাধারণ আলোচনা শেষে সম্মেলনে এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হবে।
মিয়ানমার পরিস্থিতিতে ইইউর আট দফা সিদ্ধান্ত : লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় কনভেনশন সেন্টারে গতকাল দুপুরে ইইউর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ফেদেরিকা মগেরিনির সভাপতিত্বে জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মিয়ানমার বিষয়ে আট দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে এর প্রথম দফাতেই বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। সেখানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, স্থলমাইনের উপস্থিতি, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ জনগণের ওপর অব্যাহত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনতিবিলম্বে এগুলো বন্ধ হতে হবে।
সহিংসতা ও ভয়ে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করে ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এত বিপুলসংখ্যক মানুষের দেশত্যাগের ঘটনা ওই সম্প্রদায়কে দেশছাড়া করতে পরিকল্পিত উদ্যোগেরও ইঙ্গিত বহন করে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিল এ ব্যাপারে একমত যে রাখাইনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ও গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত করে রেখেছে মিয়ানমার। এ কারণে সেখানকার প্রয়োজনগুলো পুরোপুরি যাচাই করা বা মেটানো যায় না।
সিদ্ধান্তের দ্বিতীয় দফায় ইইউ সব পক্ষকে অনতিবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে বলেছে। ইইউ মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে অভিযান বন্ধ ও বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বৈষম্য না করে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকারকে আন্ত সম্প্রদায় উত্তেজনা প্রশমন, অনতিবিলম্বে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি, আন্তর্জাতিক এনজিওসহ মানবিক সহায়তা কর্মীদের পূর্ণ ও নিঃশর্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের তাদের বাড়িঘরে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানজনক ও টেকসই উপায়ে ফেরানোর জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্যও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এ দফায় আরো বলা হয়েছে, ইইউ বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করেছে। রাখাইন রাজ্যে প্রবেশাধিকার পেলে সেখানেও প্রয়োজনে সবার জন্য কার্যক্রম পরিচালনায় ইইউ প্রস্তুত আছে।
তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারবিষয়ক ইইউয়ের গত বছরের জুন মাসের কৌশলপত্রে দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর, শান্তি ও জাতীয় ঐক্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইইউয়ের জোরালো সম্পৃক্ততা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল। তারই আলোকে ইইউ ‘রাষ্ট্রহীন’ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্বের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসহ রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশন) সুপারিশগুলোর পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতায় প্রস্তুত আছে। আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার যে আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে ইইউ তাকেও স্বাগত জানিয়েছে।
সিদ্ধান্তের চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, শিশুদের ওপর বর্বর হামলাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের যেসব গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে সেগুলো অবশ্যই বিশদভাবে তদন্ত হতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে ইইউ মিয়ানমারকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করার এবং দেরি না করে ওই মিশনকে দেশে পূর্ণ, নিরাপদ ও অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
পঞ্চম দফায় রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরে যেতে ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের আলোকে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে ইইউ মিয়ানমারকে উৎসাহিত করছে। কঠিন এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গঠনমূলক ভূমিকারও প্রশংসা করছে ইইউ।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে সিদ্ধান্তের ষষ্ঠ দফায়। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অনুপাতহীন বল প্রয়োগের প্রেক্ষাপটে ইইউ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের সশন্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও অন্য জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো স্থগিত রাখবে এবং সব ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করবে। ইইউ নিশ্চিত করেছে যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিষয়ে ইইউর যে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আছে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নিপীড়নের প্রেক্ষাপটেও প্রয়োগ করা যায়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানায়, ইইউ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোতে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রেখেছে। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ এপ্রিলই শেষ হওয়ার কথা। গতকাল সেই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে ইইউ মিয়ানমারকে আগামী দিনেও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করার কার্যত হুমকি দিয়েছে।
সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিল রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে। একইভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেও ইইউ প্রস্তুত।
সিদ্ধান্তের সপ্তম দফায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছাড়াও কাচিন ও শান রাজ্যে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে এক লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে কমেছে। ইইউ ওই এলাকাগুলোর সব সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অষ্টম দফায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত সব চ্যালেঞ্জ ও এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সমাধানে ইইউ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বিদ্যমান কাঠামোতে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জাতিসংঘের মতো এসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ফোরামে কাজ করবে। আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে অনুষ্ঠেয় আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা ও আসিয়ানের সব অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার সুযোগ ইইউ কাজে লাগাতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় আসিয়ান ও এই অঞ্চলের দেশগুলোকে সম্পৃক্ত হতেও ইইউ উৎসাহিত করছে।
উল্লেখ্য, ইইউর বিদায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য গত মাসে এককভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দেওয়া সব ধরনের ব্যবহারিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে ইইউ গতকাল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে গত মাসেই দেশটিতে বাণিজ্য মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। ইউরোপে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার (জিএসপি) সম্প্রসারিত রূপ ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য মিশনের আলোচনা করার কথা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ওই মিশনের মিয়ানমার সফর স্থগিত থাকবে। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, গণহত্যা ও বাণিজ্য সুবিধা একসঙ্গে চলতে পারে না।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তগুলো প্রসঙ্গে ইইউর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ফেদেরিকা মগেরিনি বলেন, সিদ্ধান্তগুলো সেখানে পরিস্থিতির উন্নয়নে আগামী দিনে আমাদের কাজের ভিত্তি হবে। আমরা বলেছি, অনতিবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ হতে হবে। মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশটিতে নিরাপদ ও পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। আর যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাদের টেকসই ফেরার সুযোগ দিতে হবে।
মিয়ানমারকে পরিস্থিতি উন্নতির শর্ত বিশ্বব্যাংকের : রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি তার অনুমোদন করা উন্নয়ন ঋণ নীতির জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের দেওয়া ঋণ আরো কার্যকরের জন্য মিয়ানমার পরিস্থিতিরও আরো উন্নতি হওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, বৈষম্যহীনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও সবার জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের মতো মৌলিক নীতিতে বিশ্বাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা, ধ্বংস ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিতে গভীর উদ্বিগ্ন।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট মিয়ানমার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা চুক্তি সই হয়।
প্রস্তাব গ্রহণ করছে আইপিইউ : রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের ‘জরুরি ইস্যু’ হিসেবে আমলে নিয়ে এটি নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নেবে আইপিইউ। সেন্ট পিটার্সবার্গে গত রাতে আইপিইউয়ের ১৩৭তম সম্মেলনে এসংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। গতকাল আইপিইউ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, মিয়ানমারের জাতিগত নিধন বন্ধে বিশ্বসম্প্রদায়কে এখনই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নিতে হবে। নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। এ সমস্যা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
আইপিইউ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী জাতীয় সংসদ সদস্যরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের এ বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বেশির ভাগ দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা। জরুরি বিষয় হিসেবে রোহিঙ্গা সংকটকে গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরেন। গত রবিবার গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তাঁর প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সময় বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা সংকটকে জরুরি ইস্যু হিসেবে গ্রহণের জন্য ভোটাভুটির আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টারি দলের নেতা নাইজেল ইভান্সও রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে আবেগময় বক্তব্য দেন। রাশিয়াও বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম দিনের সাধারণ আলোচনায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, মরক্কোসহ বেশ কয়েকটি দেশ অংশ নেয়।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করতে আইপিইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল ও মহানুভবতার কারণে তাদের আশ্রয় এবং খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে আসায় আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই মানবিক বিপর্যয়ের স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এ সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। ’- সূত্র কালের কন্ঠ