[english_date]

”মানুষের কাটা মাথার স্তূপ : এমন কোন যুবতী মেয়ে নেই যাকে ধর্ষণ করা হয়নি”

ইনানি বিচকে হাতের ডানে রেখে টেকনাফের দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলেই শাপলাপুর গ্রাম। এই গ্রামেই আশ্রয় নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এদের অধিকাংশই চলতি সপ্তাহেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মানুষ কোথাও নিরাপদ না। পাহাাড়ের আড়ালে গিয়ে পালালেও সেখানে গিয়ে গুলি করে মারছে। এমন কোন যুবতী মেয়ে নেই যাকে ধর্ষণ করা হয়নি। আর ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করছে।

মিয়ানমারের বুরাইঙ্গা পাড়া থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লম্বা বিল হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন ইয়াসমিন সুলতানা নামের এক যুবতী। পাঁচ দিন হেঁটে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি লাম্বা বিলে আসেন।

তিনি অকপটেই জানালেন, সেখানকার করুণ কাহিনী। বললেন, তার গ্রামে বৃদ্ধা ও তরুণীদের পৃথক লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। সেখানে তরুণী যুবতীদের আলাদা একটি বাড়িতে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা গণধর্ষণ করেছে। তিনি নিজেও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তবে শুধু ধর্ষণই নয়, তার সামনেই তিন তরুণীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়। নিজেকে অসুস্থ বলে হাতে ধরে পায়ে পড়ে কোনোমতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন ইয়াসমিন।

শারীরিকভাবে দুর্বল থাকা ইয়াসমিনকে লম্বা বিলের একটি খালের কিনারে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি জানান, তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এক স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
শুধু ইয়াসমিনই নন, তার মতো অসংখ্য যুবতী তরুণী মিয়ানমারে বার্মিজ আর্মি ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধদের দ্বারা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

শুধু নির্যাতনই নয়, অনেক তরুণীকে হত্যাও করা হয়েছে। চোখের সামনে বয়োবৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যার পাশাপাশি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

সলিমুল্লাহ নামে একজন বলেন, তাঁর দুই ছেলেকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনারা। তিনি জানালেন, তিনি এমন দৃশ্য দেখেছেন যা ভাবলেও তিনি ঘুমাতে পারেন না। সেটা কী? জানতে চাইলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। বললেন, ‘একটা মাঠের কোনায় কেবল মানুষের কাটা মাথা স্তূপ করে রাখা হয়। গলা কেটে এনে মাথাটা ফেলা হয় ওই স্তূপে। স্তূপটা একসময় অনেক বড় হয়। ’

সলিমুল্লাহর চোখের পাতা পড়ছিল না। একনজরে তাকিয়ে ছিলেন। দেশে বাড়িঘর, জমি আছে। আবার সব ঠিক হলে ফিরবেন না? তিনি বললেন, ‘যা দেখলাম, কীভাবে বলি সব ঠিক হয়ে যাবে? কীভাবে বলি আবার শান্তি আসবে?’

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ