মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করেই (জি টু জি প্লাস) সে দেশে কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় যেতে জনপ্রতি খরচ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। আর কর্মীদের যাবতীয় তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হবে।
ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক মাসের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। এর আগে এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এসব কথা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কর্মী নেওয়ার কাজটি দেখভালের কথা জানালেও সেই সিদ্ধান্ত আর থাকছে না। কয়েক দিন আগে মালয়েশিয়ার সরকার ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। তবে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে এখনো বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার বলেন, ‘জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর আলোচনার শুরুতে একজন কর্মীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ ধরা হলেও গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে কিছু বিষয়ের খরচ নিয়োগদাতারা দেবেন। এর ফলে জনপ্রতি খরচ ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই থাকবে। মালয়েশিয়া চাইছে পুরো কাজটি অনলাইনে করতে। এটা কীভাবে করবে সেটি তারাই ঠিক করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। শিগগিরই বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
মন্ত্রণালয় বলছে, এর আগে সরকারিভাবে (জি টু জি) মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য যে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ লোক নিবন্ধন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই কর্মী পাঠানো হবে।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া হলেও নানা অনিয়ম ও প্রতারণার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর ২০১২ সালের নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়ার চুক্তি হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার লোক নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে থেকে গত তিন বছরে প্রায় আট হাজার কর্মী দেশটিতে গেছেন। তবে জি টু জির বাইরে ব্যক্তিগতভাবে এখন অনেকেই মালয়েশিয়া যাচ্ছেন, যেটি গত তিন বছর বন্ধ ছিল।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, সরকারিভাবে কম টাকায় লোক নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও ওই সময় মালয়েশিয়া পর্যাপ্ত চাহিদাপত্র পাঠায়নি। বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর বিরোধিতা করেন। সরকারও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারায় সেখানে সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি ব্যর্থ হয়।
চলতি বছরের মে-জুন মাসে সাগরপথে মানব পাচার, গণকবর ও নির্যাতন নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে জনশক্তি পাঠানোর কাজটি বেসরকারি পর্যায়ে (বিজনেস টু বিজনেস পদ্ধতি বা বি টু বি) ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতি হলো জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি সরকারের হাতে থাকবে। তবে সরকার চাইলে এ কাজে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদেরও যুক্ত করতে পারবে।
এ নিয়ে গত কয়েক মাস দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ঢাকায় আসে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল শরিফউদ্দিন বিন কাশেমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল তাঁরা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
রাজধানীতে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলামও অংশ নেন। বৈঠকের আগে ও পরে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গতকাল রাতেই প্রতিনিধিদলটির ঢাকা ছাড়ার কথা।
‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব মনসুর আহমেদ কালাম বলেন, বায়রার সবাইকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই খুশি হবেন।