দলের এক গোপন জরিপ তালিকায় মনোনয়ন হারানোর তালিকায় ৮০ জন এমপির নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায় জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচনে সম্ভাব্য জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিএনপির অংশগ্রহণকে সামনে রেখে যেসব এমপি এলাকায় বিতর্কিত, জনসম্পৃক্ততা বিচ্ছিন্ন এবং যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম না হওয়াসহ নানাভাবে নিন্দিত হয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে যাদের জনসম্পৃক্ততা আছে এ রকম মন্ত্রী-এমপিদেরকেই শুধু সম্ভাব্য মনোয়ন তালিকায় রেখে বিভিন্ন সংস্থার গোপন জরিপের মাধ্যমে ৮০ জন এমপিকে প্রতিস্থাপনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হারানো এমপিদের তালিকায় রাজধানী ঢাকার ১৬ আসনেরও ৩-৪জন এমপি রয়েছেন-যাদেরকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে। রাজধানী ঢাকার বাইরে সাভার এলাকারও একজন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী এমপিসহ ঢাকা জেলার একাধিক আসনের মনোনয়নে পরিবর্তন এনে এসব আসনে জনসম্পৃক্ত এবং দলীয় রাজনীতির সঙ্গে নিবেদিত নেতা-সংগঠকদের মনোনয়ন দেয়ার প্রাথমিক তালিকা প্রনয়ণ করেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
গোপন জরিপের মাধ্যমে কক্সবাজার আসনের একজন বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত, নিন্দিত এমপিকে বাদ পড়ার তালিকায় নিশ্চিত করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরীরও বেশ কয়েকজন এমপিকে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এলাকার সঙ্গে তাদের জনবিচ্ছিন্নতা এবং তাদেরকে ঘিরে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের কারণে। রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি টাঙ্গাইলের মনোনয়ন তালিকা থেকেও বহুল বিতর্কিত ও নিন্দিত একজন এমপিকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে সেখানের জনসম্পৃক্ত প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী বিভাগেরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসনের এমপিদের বাদ দিয়ে এখানের জনসম্পৃক্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে তরুণ প্রার্থীদেরকে প্রাধান্য দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিলেট বিভাগের অনেক আসনেই এবার পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগের একজন নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা-যিনি একবার সিলেটে বিভাগের একটি আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি আসনের এমপিদের জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের নাম বাদ পড়ার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হারানোর এ তালিকাকে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের একজন ‘ক্রস লিষ্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান নানা কারণেই আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ-কারণে যে টানা ২ টার্ম পূর্ণ করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি যাই বলুক না বলুক-আর যে ধরনের সরকারের অধীনেই নির্বাচনের দাবি তুলে মাঠ গরম রাখুক না কেন-তারা যে কোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে-এ ব্যাপারে সরকার নিশ্চিত। তাই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনী লড়াইতে টিকে থেকে আওয়ামী লীগ যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আবার সরকার গঠন করতে পারে-সে বিবেচনার আলোকেই এবারের মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করতে উচ্চপর্যায়ের সংস্থার গোপন জরিপের মাধ্যমে সব ধরনের বিতর্কিত এবং নিন্দিত, এলাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন এমপিদের বাদ দিয়ে সেখানের যোগ্য, সৎ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনসম্পৃক্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।