সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের ভোটার করতে এলাকা পুনর্বিন্যাসের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি বিলুপ্ত ছিটমহল ইউনিয়নের ওয়ার্ডে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় ভোটার এলাকা পুনর্বিন্যাস করতে লালমনিরহাট সদর ও হাতিবান্ধা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। পর্যায়ক্রমে সকল ছিটমহলের ভোটারকে একই পদ্ধতিতে এলাকা পুনর্বিন্যাস করা হবে। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার এ চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে, পুনর্গঠিত সাধারণ ওয়ার্ড, মৌজা/এলাকার বিবরণ ও অন্তর্ভুক্ত বিলুপ্ত ছিটমহলের নাম ও নম্বর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোটার এলাকা পুনর্বিন্যাস করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ভোটার করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কমিশন সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ ব্যবস্থায় সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান—বাংলাদেশি পরিচয় বহন করেও গত ২৫ বছর যাবত্ ভোটারাধিকারের সুযোগ পাননি বিলুপ্ত ছিটেরবাসীরা। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে ৪০ হাজার ছিটমহলবাসীর নাম ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর যত বারই ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে, তত বারই আইনি জটিলতার কারণে তাদের ভোটার করা হয়নি। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকাতেই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্রও ভাগ্যে জোটেনি। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী না হলে পাসপোর্টও মেলে না। তবে এবার আর নামে বাংলাদেশি নয়, সত্যিকারের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে যাচ্ছেন ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা। অচিরেই ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইত্তেফাককে জানান, চার বিলুপ্ত ছিটমহলের বিষয়ে ইসির নির্দেশনায় সেখানকার ভোটার এলাকা পুনর্বিন্যাস করতে বলা হয়েছে। পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হলে শিগগিরই এ সব নাগরিককে ভোটার করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি ১০৭টি বিলুপ্ত ছিটমহলের বিষয়ে একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার বিলুপ্ত ১৫১ বাঁশপাই ও ১৫২ বাঁশপাই ভিতরকুটি ছিটমহল কুলাঘাট ইউনিয়নের এক নম্বর ও পাঁচ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে অন্তর্ভৃুক্ত করা হয়েছে। হাতিবান্ধা উপজেলার বিলুপ্ত ১৩৫ গোতামারী ও ১৩৬ গোতামারী ছিটমহল গোতামারী ইউনিয়নের ১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে অন্তর্ভৃুক্ত করা হয়েছে। চারটি বিলুপ্ত ছিটমহল ইউনিয়নের ওয়ার্ডে অন্তর্ভৃুক্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার এলাকা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এ পুনর্বিন্যাসে নতুন ভোটার এলাকা সৃষ্টি হলে তার নামসহ কোড নম্বর অনুমোদনের জন্য ইসিতে পাঠাবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত চুক্তির দলিল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ছিলমহলবাসীর ভোটার হওয়ার দ্বার উন্মোচিত হয়। গত ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির দলিল হস্তান্তর করে। এর মধ্য দিয়ে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘ ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী—দাশিয়ারছড়াসহ ভারতের ১১১টি ছিটমহল ১ অগাস্ট প্রথম প্রহর থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যুক্ত হয়। একইভাবে ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান—বিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে অনেকগুলোই বিদ্যমান পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ওয়ার্ডে যুক্ত হতে পারে। তাতে নতুন ভোটার এলাকার দরকার পড়বে না। কিন্তু নতুন ইউনিয়ন হলে বা নতুন ওয়ার্ডে যুক্ত হলে ভোটার এলাকাও নতুন হবে। ভোটার এলাকা নির্ধারণ করে পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত জিও কোড জারি পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে কমিশন।