২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভালোবাসার কবিতা

ফাগুন,  হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
     তোমার   হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
আমার   আপনহারা প্রাণ   আমার   বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥

ফাগুনের রেশের সাথে সাথে আগামীকাল মিলিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ ।  ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধুমাত্র অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। এটি একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। এর রং-রূপ-গন্ধ কিছুই নেই আছে শুধু অনুভূতি। বিশেষ কোন মানুষের জন্য ভালোবাসা স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো এমন মুহূর্তকেই স্মরণ করে লিখেছিলেন, ‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর/ভালোবাসিবারে, দে মোরে অবসর।’ জীবজগতের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক হল ভালোবাসা। যার শক্তিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা যায়।

তাই ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ‘ভালোবাসার কবিতা’  শিরোনামে আজকের এই কবিতা…

benar1

রিজোয়ান মাহমুদ  
তোমার কানে পশিল মরম

তোমার কানের ‘পরে অবিরাম আমার মন্ত্রণা
থেমে গেলে বাঁচি , জানি সে এখন শুদ্ধ না
বেদনা উৎসব রেখে গেলে ,খাবে বিষ নাগ
কোন ঝরের রাতে কবরে নামবে নীল অনুরাগ !
তোমার পা ‘দুখানি বুকের ভেতরে রাখি
আমি অধম আজও পাখির বাসার স্বপ্ন আঁকিre
তোমার ঠোঁট দুটোয় গলছে লাল শিখা
তবু পতিত পাতার মতন আমি ,একা একা !

 

ভাগ্যধন বড়ুয়া
চোখের ভূগোল

প্রতিদিন সূর্য ডুবে বাটালির মোড়ে
যারা চেয়ে থাকে তারা অনুভব করে
আলোছায়া ঘিরে থাকে জীবন যৌবন
একদা বকুল ফুলে চোখের ভূগোল

ডায়েরি স্মরণে আনে প্রতিটি বিকেল
পরীরপাহাড় জানে নজরের টান
কোকিলের বুকে জমা প্রিয়তম ডাক
কথা বলে অনর্গল, দাঁড়ানো সময়
 
অতিচেনা পথ ধরে হেঁটে যায় বেলা
আমিও এগিয়ে যাই আগন্তুক পথিক
কিছুটা অচেনা বোধে শীতের কাঁপুনি
অলিখিত কথা জানে বটবৃক্ষ মূল
 
আড়াল করেছি মুখ কুয়াশা কায়ায়
কে তুমি দাঁড়াও এসে আপন মায়ায়…!
 

re-1শেখর দেব
ভালোবেসেছো তবু বাসোনি

বিশ্বাসের বেলুন উড়িয়ে বুঝেছি
ভালোবেসেছো তুমি
অথচ উদ্বায়ী স্বপ্নের স্বভাবে ফুরিয়েছো সব
মরমী মনে মেখেছো অনন্ত দুখের রঙ।
আজ সহস্র বছর দূরে তুমি নীরব অন্ধকার
ভীষণ বেদনার ভেতর জানি না অপেক্ষায় কার
বুকে নিয়ে সত্য বিশ্বাস
বেসেছো ভালো অনন্ত অপার।

অবিশ্বাসের বেলুন ফুটিয়ে জেনেছি
ভালোবেসেছো তুমি
অথচ অচেনা দেহের সৌরভে তুমি নিবিড় আকুল
মানুষের খোঁজে বরষা ভুলেছে বেদনা বিলাপ!
একাগ্র ধ্যানের ভেতর সত্যেরে আজ চুমি
বৃষ্টি ধারা ঝরে তবু গলে না মনোভূমি
বিশ্বাস ভাঙে চরম চুরমার
ভালোবাসনি তুমি।

 

রত্নদীপা দে ঘোষ
ফেরাঘর

তোমাকে ভাবি আর তোমার নদীতে পাহাড়ি হয়ে যাই আদিবাসি স্রোত তুমুল নাচায় ফুলপাতা রমণীয় সূর্যের ঝর্ণা আমার আকণ্ঠ পিয়াসা আমারি লেখা তিনখানি পিপাসা আমার বিশ্রামে তুমি ছায়া থাকো তোমার দুঃখসুখের সংসারে আজন্ম তল্পিতল্পা গুটিয়ে আমি তোমারি পোষা কুঁড়েঘরটি যুবতী বাদলে কিশোরী বর্ষায় আকাশের কালো আর মেঘফর্সায় কেমন ফাগুন ছড়িয়ে পড়ছে ভিতরে আর বাহিরের আগুনে কেমন মধুপ গড়িয়ে নির্জন ছুটি আজ খুব খুব কুসুম ছুটি আজ ঘরফেরত চলো যাই ভালবাসার ফেরাঘরে ছুটে যাই চলো

 

উপল বড়ুয়াabstract-
তীরবিদ্ধ তীরন্দাজ

তোমার চোখের ভেতর ঢুকে পড়েছি। খুব গোপনে খুব সর্ন্তপণে।
তোমার চোখের গুরুতর অভিমান; তোমার চোখের অবাক চাহনি
এখন আমি।

মিহি বালুকণার মতো ঢুকে পড়েছি। অগোচরে। ভীষণ অনাচারে।
রোদ চশমার ফোঁকরে; দু’পাতার অন্তরালে। বিষন্ন দুপুরে।

নাশিদা খান চৌধুরী
আড়

কত সহজে এঁকে দেয়া যেত প্রেমের কাব্য !

অযাচিতের মতোই ওষ্ঠের খুনসুটি, পরমুহুর্তেই অনাদায়ে ছিটকে বেরিয়ে যায় তীর্যক ব্যাঙ্গ ! আকাঙ্ক্ষার দোঁহে মিশে একাকার, শুধু মুখ ফোটে নি বলে যাওয়া হয় নি । অথচ, কত অযুত নিযুত কর্ষণ !

শুনেছি, ভালবাসা দূরে গেলেই নাকি টানে ! ফিরে ফিরে যেই চেয়েছি, তাচ্ছিল্যের হাসি ! সে হাসিতেও মরণ আড়বার ! মাঝে মাঝেই খুঁজি, আজো আছি তো ! খুঁজে পাই দ্রোহে, খুঁজে পাই প্রেমে – মগ্নতায় জ্বলে ওঠে ! তাই অঙ্গার হয়েই ভালবাসা চিনতে যাওয়া বারবার !

দ্যাখাই প্রজ্বলিত শিখা, দ্যাখো বিষ্ফোরণ ! মুখ ফোটে না বলেই নেভানো হয়না এত প্রেম, তবুও, কত অযুত নিযুত কর্ষণ ! খিল এঁটে থাকা দুয়ার, কড়া নাড়তেই পারতে, অক্ষরেখা পেরিয়ে জানতে পারতে সময়ের বলিতে চড়ানো চৌচির অধর না ভেজানোর উপাখ্যান !

একবার চোখ রেখো ওই দ হয়ে থাকা দেহের ‘পর ; চাইলে খুলে দিও সমান্তরালে । পড়ে নিও পান্ডুলিপির ভাঁজে কুঁকড়ে যাবার রহস্য ! না চাইলে, অভিমানী ঠোঁটে ভাসবে না অমৃত ।

কত কর্ষণ ! শুধু মুখ ফোটে না বলেই বলা হয় না সব ।

 

হাসান মসফিক
অন্ধপাখি

গতশীতে সাইবেরিয়া থেকে আসা একটি পাখি ফেরত যায়নি বলে খবরে প্রকাশ রয়েছে! পাখিটির চোখ আঁকা গলায় একটি মাদুলি রয়েছে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ছড়িয়ে পড়ে বুনোফুলের ঘ্রাণ … পাখিটির ভাষা বিষয়ে কোনকিছু বলা হয়নি। রাত-বিরেতে পাখিটির কান্নায় ভেসেছে যে নদী, তার জবানিতে পাওয়া গেল উক্ত তথ্য!

পাখিটির সাথে বিষহরির দ্যাখা হয়েছিল- পোয়াতি, মাঘি অমাবস্যায়। খালপাড় তুঁতের বাগানে দাঁড়িয়ে বিষহরি বলেছিল একদিন- “সবগাছে কেন পাখি বাসা বাঁধে না”
 

শর্মিষ্ঠা ঘোষ_abstract-art
স্বপ্নে

আমার ডেনিম রঙা দুঃখ গুলি দিলাম তোমায় , তোমায় দিলাম
সিক্স প্যাক্স এর মস্ত আদরে বডি হাগিং শার্ট করে নাও
জিন্স পকেটে চেন হ্যাঙ্গিং আমার কিছু আহ্লাদী সুখ
ও মন আমার , আমার জীবন, তোমার কানের ডায়মন্ড রিং

তোমার বাজুর ট্যাটুর খেয়াল আমি নেহাত গাঁইয়া গোঁয়ার
নাম লিখেছ সাত প্রণয়ীর সাত ভাষাতে পিরিত জোয়ার
অ্যানড্রয়েডের কোটি অ্যাপসে তোমার বিলা , পরানপ্রিয়
আমি তোমার শেষ পারানির ছাই এর ভাঙ্গা কুলোই হব
তোমার ঘ্যামা বুলেট কাঁপায় আমার রাস্তা আমার পাড়া
কোমর জড়ায় সাত লহরী , হায়রে , আমার কপাল ফাটা
নেহাত আমি পাশের বাড়ি আমি নিছক সাদামাটাই
ফেসিয়াল গোল্ড স্পা এর ঠ্যালায় মাস পহেলায় পকেট ফাঁকা
আমি কি আর জাঁক দেখাবো ! নাইকে স্নিকার ব্র্যান্ডেড টি
তোমার পাশে ছাতা মানায় হাওড়া হাট আর কাঁথা স্টিচ !
স্বপ্নে যখন ঘি খেয়েছি , কম নেব না , তোমাকেই চাই
ছুপা রুস্তম আমি তোমার জাস্ট প্লেটোনিক প্রেমিক হব

 

benar1

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ