আকাশ ইকবাল
সামান্য বৃষ্টি হওয়া মাত্রই চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকটা সড়ক হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার সড়কগুলো। আমি হালিশহরেই থাকি। গত বর্ষায় আমাকে যতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ততটা দুর্ভোগ মনে হয় গ্রামে পুরো ১০ বছরেই পোহাইনি। নগরীর ভেতরে যে ছোট বড় খালগুলো রয়েছে সেগুলো প্রভাবশালী খাল খেকোরা দখল করে গড়ে তুলছে একের পর এক স্থাপনা। এতে দিনদিন খালগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নগরের কিছু অসচেতন মানুষ বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট ডাজবিনে না ফেলে মেনহোলে ফেলার কারণে মেনহোলগুলোও ভরাট হয়ে যায়। বর্ষায় বৃষ্টির পানি সঠিক সময়ে নিষ্কাশন না হওয়ায় নিচু সড়কগুলোতে জমা হয়ে থাকে। বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর এতে শুরু হয় নগরবাসীর চরম দুর্ভোগ। বর্ষা শেষ হলেও নগর বাসীর দূর্ভোগ শেষ হয় না। জলাবদ্ধতা না হলেও নগর থেকে যানজট দূর হয় না। বর্ষায় পানির ¯্রােত কিংবা জলাবদ্ধতায় পানি জমে থাকার কারণে নগরীর প্রায় সড়কে ছোট বড় গর্তের জন্ম নেয়। যেমন- অলংকার মোড় থেকে বড়পোল, বড়পোল থেকে কাস্টমম রোড, আগ্রবাদ এক্সেস রোড ও হালিশহর এলাকার সড়কগুলো গর্তে পরিণত হয়ে যায়। বর্ষার শেষ হয়ে শুস্ক মৌসুম আসার পর সড়কগুলো সংস্কার না করাতে কাদা মাটি ভরা গর্তগুলোতে এখন ধুলাবালি উঠছে। অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে খোঁড়াখুঁড়ি ও ওয়াসার কাজে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির পর সংস্কার না করার কারণে যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে উঠেছে সড়কগুলো। বর্ষা তো চলে গেছে কিন্তু এবার শুরু হয়েছে ধুলাবালি উপদ্রব। সমস্যা থেকে এই শহরের মানুষ যেন মুক্তিই নেই। সমস্যা একের পর এক পেছনে লেগেই আছে।
এই ধুলোবালিতে মানুষ একের পর এক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন- চলতি বছরের আগে কখনো মাথায় খুশকী কিংবা আমার শ্বাস কষ্ট হয়নি। এই বছর হয়েছে। কারণ শহরের সড়কগুলোতে প্রচুর ধুলাবালি। শহরের সড়কগুলোতে কি পরিমাণ ধুলাবালি তার পরিমাপ সঠিক ভাবে করা না গেলেও আপনি আন্দাজ করতে পারবেন খুব সহজে! যখন শহরের রাস্তায় যানবাহন চলাচল করে, বিশেষ করে প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসগুলোর দিকে তাকালে। গাড়ীগুলোর আসল রঙই চেনা যায় না। ধুলাবালির নিচে ঢাকা পড়ে গাড়ির চেহারা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ধুলাবালি থেকে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। মাথা থেকে শুরু করে শরীরের ভেতর পর্যন্ত ধুলাবালির ক্ষতিকর প্রভাব আছে। বিভিন্ন চর্মরোগের কারণ ধুলাবালি।’ আমার এক পরিচিত একটা ঔষধ কোম্পানীতে মার্কেটিং অফিসার পদে চাকরি করেন। সকাল থেকে বাসা ফেরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি নগরীর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তাঁর মাথায় চর্ম রোগ হয়েছে। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন চর্ম রোগ হওয়ার কারণ ধুলাবালি। ধুলাবালি মাথায় জমতে জমতে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়েছে। বাতাসের সাথে উড়ে গিয়ে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে ঢুকে যায়। এতে লোমের গোড়ায় যে লোমকূপ আছে তা বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ যখন অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তখন এই লোমকূপ দিয়ে শরীরের ভেতর থেকে ঘাম বের হয়। ধুলাবালিতে লোমকূপের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পাচড়া হয়। অনেক মানুষেরই মুখে ব্রণ হয়। এই ব্রণ হওয়ার একমাত্র কারণ ধুলাবালি। আমরা প্রায় সময় টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখি বিভিন্ন ধরণের ফ্রেশওয়াশ। বিজ্ঞাপনগুলোতে দেখা যায় ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ফ্রেশওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধোয়া, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর সাথে সাথে আবার ফ্রেশওয়াশ ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে নেয়। এই বিষয়ে চিকিৎসকরাও সচেতন করেন।
মাঝে-মাঝে রাস্তায় বের হলে হঠাতই আমার শ্বাস কষ্ট হয়। যদিও শ্বাস-প্রশ্বাস আমার কোন সমস্যা নেই বা ছিলো না। শুধু মাত্র পাশে কেউ ধূমপান করলে শ্বাস কষ্ট হতো। আমার মতো অনেকেরই শ্বাস কষ্ট হয়। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া শিশু, কলেজ পড়ুয়া কিশোর ও বয়স্ক নর-নারীদের। অনেকের এ্যাজমা ও এলার্জি হয়। এতেও ধুলাবালির ক্ষতির প্রভাব রয়েছে। ধুলাবালির আরও একটি কঠিন প্রভাব হচ্ছে ফুসফুসে ক্যান্সার!
২০১৭ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যানসেট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে বলা হয় ২০১৭ সালে পুরো বিশে^ এক কোটিরও বেশি মানুষ দূষণে মারা গেছেন। আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে যে-২০১৭ সালে এই দূষণে ্সব চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে বাংলাদেশে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের পরেই ছিল আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। দূষণের কারণে মৃত্যুর বেশির ভাগ-ই ঘটেছে দূষণের কারণে সংক্রামক নয় এমন রোগ। যেমন- হৃদরোগ, স্টোক এবং ফুসফুসে ক্যান্সার। এই আর্টিকেলে আলোচিত বিষয়গুলো নিশ্চই আমাদের দেশের জন্য সুখবর নয়। ভয়ংকর খরব বটেই। একটি আন্তর্জাতিক সাময়িকী দুই বছর গবেষণা করে যখন বলে দূষণের কারণে বাংলাদেশে সব চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ছে, তখন আমাদের দেশের সরকার কিংবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দপ্তরগুলোকে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন থেকে যদি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী।
বৃষ্টিতে দূর্ভোগ ধুলাবালিতে রোগ; অতিষ্ট জনজীবন
