৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিয়ে করার অদ্ভুত সব কারণ

মোটামুটিভাবে দেখতে গেলে বয়স ২৫শের কাছাকাছি এলেই বিয়ে নিয়ে মাতামাতি শুরু করে বাড়ির লোক। তাদের মতে, বিয়েটা নাকি করতেই হবে। একজন সঙ্গীকে জীবনে গ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু কেউ যদি বিয়ে না করেই সারাজীবন কাটাতে চায়, সে বেলায়? তখন সেই ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে পারে না কেউ। কিছুতেই বুঝতে চায় না বিয়েটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তবে খুব অদ্ভুত কারণে বিয়ে করে। সেগুলি কী কী জেনে নিন…

১. বাবা-মায়েদের মতে বিয়ে করলেই জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়। ছেলে রাত করে বাড়ি ফিরছে? কারোর কথা শুনছে না। বিয়ে দিয়ে দাও… মেয়ের কারোর সঙ্গে চক্কর চলছে, বিয়ে দিয়ে দাও।

২. সেক্স করার লাইসেন্স হল বিয়ে। অন্তত ভারতীয় সমাজ তাই মেনে করে। পরিবারের মত নিয়ে ঘটা করে পালিত হয় ফুলসজ্জার রাত। গোটা দুনিয়াকে ডাকঢোল পিটিয়ে জানানো হয়, আজ রাতে আমি সেক্স করছি। আসলে মোদ্দা কথা হল, প্রতিরাতে একজনকে চাই। এমনি এমনি তো সেটা হয় না। তার জন্য বিয়ে করাটা ভারতীয় সমাজে বাধ্যতামূলক।

৩. ভারতীয়দের কাছে বিয়েই হল জীবনের লক্ষ্য। ছেলেদের ছোটো থেকে বলা হয়, ভালো রোজগার না করলে কোনও মেয়ে বিয়ে করতে চাইবে না। মেয়েদের এই ট্রেনিং দিয়েই বড় করা হয়, সুশীলা না হলে কোনও ছেলে বিয়ে করতে চাইবে না। এ ছাড়া আর কোনও উদ্দেশ্য থাকতে নেই জীবনে। কোনও মেয়ে যদি লেখাপড়া করে, ভালো চাকরি করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চায়, সেটাকেও বিয়ের প্রোফাইলে কাজে লাগিয়ে দেয় বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন – “মেয়ে দারুণ এডুকেটেড। মোটা মাইনের চাকরি করে।”

৪. সিঙ্গেল থাকব না। জীবনে কাউকে একটা চাই-ই চাই। শেষ বয়সে সে দেখবে, এই হল ভয়। ৩০ বছর হয় গেলে বিয়ে না হলে, ভারতীয়রা ভাবতে থাকে নিঃসঙ্গ মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু তাঁরা এটা কিছুতেই বুঝতে পারে না মৃত্যু জিনিসটা নিঃসঙ্গই। যেভাবে আমরা একা পৃথিবীতে আসি, একাই যাই পৃথিবী ছেড়ে। এই সহজ কথাটা সবাই জানে, কেউ মানতে চায় না।

৫. বিয়ে নিয়ে মহিলাদের ধ্যানধারণা আরও অদ্ভুত। তাঁরা মনে করেন, বিয়ে করলেই সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হওয়া যায়। এটা বোঝেন না, বিয়ে হল পরাধীনতার আরও এক ধরন। বাবা-মায়ের অধীন থেকে স্বামীর অধীনে চলে আসা। আজীবনের অঙ্গীকার। স্বামী মুক্ত মানসিকতার মানুষ হলে স্বাধীনতা এলেও আসতে পারে। কিন্তু তাতেও অনেক বাঁধন থাকে।

৬. ভারতীয়রা বিয়ে করে বাবা-মায়ের মুখ চেয়ে। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে মৃত্যু পথযাত্রী ঠাকুমার কথা ভেবে। তিনি নাতি/নাতনির বিয়েটা দেখে যেতে চান, নাতজামাই, নাতবউ দেখে যেতে চান বলেই কিনা বিয়ে করা। ঠাকুমা গত হওয়ার পর যদি বিবাহিত জীবনে সুখ না আসে, সেটা কেউ ভেবে দেখে না।

৭. পণ নেওয়া বা দেওয়া দণ্ডণীয় অপরাধ জেনেও অনেকে সেই প্রথায় বিশ্বাসী। ফলে মেয়ের বাড়ি থেকে মোটা পণের লোভেও বিয়ের পিঁড়িতে বসে অর্থলোভী পাত্র।

৮. সন্তান সুখের আশাতেও বিয়েকে বেছে নেয় ভারতীয়রা। সন্তানকে সামাজিক পরিচয় দিতে বিয়েটা করতেই হয় এ দেশে। যদিও শীর্ষ আদালত বলেই দিয়েছে, সিঙ্গল মা হওয়া সমাজ বিরুদ্ধ কাজ নয়। তবুও আড়ষ্ট ভারতীয় সমাজ কি মেনে নেবে কোনও সিঙ্গল বা অবিবাহিত মাকে? মেনে নিতে লেগে যাবে আরও ৫০ বছর। ততদিনে অনেকখানি সংগ্রাম ও বিয়েটাই সম্বল।  

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ