আবছার উদ্দিন অলি
আমাদের চারপাশের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু বাস্তবে আমরা তা কতটুকু পালন করছি? এই প্রশ্ন এখন সবার আগে এই কারণেই যে, যেভাবে পরিবেশের উপর আমাদের অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছি, সেভাবে প্রকৃতিও আমাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ করছে। গাছকাটা, পাহাড়কাটা, পুকুর ভরাট, নদী ভরাট নদীদখল, বন জঙ্গল পরিস্কারের নামে উজাড় করে দিচ্ছি সব কিছু। এতে করে ক্রমাগত বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং আমাদের জীবন। যত্রতত্র অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, পরিকল্পনাহীন দালান, মার্কেট, শপিংমল নির্মাণ পরিবেশকে আরো দূষিত করেছে। যে হারে অফিস, বাসাবাড়ী, প্রাইভেট গাড়ীতে এসি ব্যবহার হচ্ছে তাতে করে কয়েক বছরের মধ্যে গরমের তীব্রতা স্বাভাবিক জীবন যাপনে ছন্দপতন ঘটাবে। অতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে গরমের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। বাইরের বাতাস এসি কেড়ে নিচ্ছে, আবার ভেতরের সমস্ত গরম বাইরে ছাড়চ্ছে। এতে রাস্তাঘাটে গরম হাওয়া এখন উপলব্ধি করার মত বেড়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীনব যাত্রায় পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছরের মত নানা আয়োজনে চট্টগ্রামেও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হবে। ঘটা করে এই দিবসটি পালন করলাম, সভা সমাবেশ, সেমিনার, চিত্র প্রর্দশনী, গোলটেবিল বৈঠকে করে শেষ করলাম। কিন্তু পরেরদিন আবার সব কিছু আগের মত- এটা চাই না। এ বিষয়ে কঠোর আইন ও জনমত তৈরি প্রয়োজন। সেই সাথে সচেতন হতে হবে সবার আগে আমাদের নিজেকে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দশ বছর পর এই নগরীতে বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটা, পাহাড় ধস, গাছ কাটার কারণে প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা আমরা দেখেছি। ভূমিকম্প, বন্যা জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সামনে কড়া নাড়ছে। এর মোকাবিলায় আমরা কতটুকু প্রস্তুত তা সবার ভালো জানা আছে। একের পর এক বিল্ডিং ধস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারছিনা। নেপালের ভূমিকম্প আমাদের জন্য একটি আগাম বার্তা। বড় আকারের ভূমিকম্প হলে ঢাকা-চট্টগ্রামে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা কল্পনা করা যাবে না।
এখন আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে অজানা আতংকে। কখন কি ঘটে যায় তা বলা যায় না। গত দশ বছরের ঢাকা চট্টগ্রামে যে হারে লোকসংখ্যা বেড়েছে, যে হারে বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে, তাতে করে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানী ঘটবে, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ভরাটের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা মানুষের ভোগান্তি একমাত্র কারণ। পাহাড় ঢেকে বিলবোর্ড স্থাপন আর আকাশছোঁয়া বড় বড় দালানে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুূর্ঘটনা। বিল বোর্ডের কারণে শহরটাকে গিলে খেয়েছে মনে হয়। ইদানিং নব নির্বাচিত মেয়রকে অভিনন্দন জানানোর নামে বিলবোর্ড প্রতিযোগিতা বেড়ে চলছে। বিষয়টি মেয়র মহোদয় আন্তরিকভাবে দৃষ্টি দেবেন বলে আশা রাখি। নগরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, খাল খনন ও বিলবোর্ড উচ্ছেদে আপনার ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এমনিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের তীব্রতা বেশি ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে গরমে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এভাবে গরম পড়তে থাকলে বাংলাদেশেও প্রাণহানী ঘটবে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ-গ্রীষ্মকালে গরম থাকলেও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হতো, কিন্তু এবার বৃষ্টি পড়ছে না এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে রোগ ব্যাধি বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে আবহাওয়া গরম হওয়ার পেছনে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদগণ। পরিবেশেরও একটি নিজস্ব ধারণ ক্ষমতা রয়েছে আমরা এর বেশি চাপ প্রয়োগ করার কারণে দিনে দিনে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দালানে দালানে পুরো নগর এখন ঠাসাঠাসি। আলো বাতাস চলাচলের সব পথ বন্ধ। গভীর নলকূপ স্থাপন চলছে প্রতিযোগিতা দিয়ে। মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। যে হারে গভীর নলকূপ স্থাপন চলছে তাতে করে মাটির নিচে ৫ বছর পর এক হাজার ফুটেও পানি পাওয়া যাবে না। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পুকুরের মাছ চাষেও সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। পরিবেশ কেন হঠাৎ করে এমন হলো। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাসযোগ্য নগরী উপহার দিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজন তাই এখনও সময় আছে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এখনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নইলে বিপদ আমাদের রেহাই দেবে না। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, দশ তলা ভবনে আছি যদি মনে করে আমার কোন সমস্যা নেই, তাহলে ভুল করবেন। মুহুর্তের ভূমিকল্পে দশতলা ভবন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তাই সবাইকে সাবধান এবং সচেতন হতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এ বিষয়ে কেউ দায় এড়াতে পারবে না। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে না হলে বিকল্প বিপদ আসতে বেশি সময় নেবে না। জীবন বাঁচাতে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে এর বিকল্প নেই।