ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্যাপন করা হচ্ছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন। গির্জায় গির্জায় চলছে প্রার্থনা। যুদ্ধ বন্ধ ও মানবজাতির শান্তি কামনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। নানা আয়োজনে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন যিশুখ্রিষ্টের অনুসারীরা।
প্রতিবছরের মতো এবারও যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেমে বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা ছিল। কনকনে শীত উপেক্ষা করে এ সময় গির্জায় উপস্থিত ছিলেন কয়েকশ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও।
বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে ভ্যাটিকান সিটিতেও। শনিবার দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গ ব্যাসিলিকা গির্জায় কয়েক হাজার মানুষ প্রার্থনায় অংশ নেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এ সময় যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যে নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলেন।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘যেখানে পশুরাও তাদের নিজেদের ভাগের খাবার খায়, সেখানে মানুষ সম্পদ ও ক্ষমতার ক্ষুধায় নিজের ভাইবোন এমনকি প্রতিবেশীর হক নষ্ট করতে দ্বিধাবোধ করে না। আমরা কত জায়গায় যুদ্ধ দেখছি? পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ ও সহিংসতায় মানুষের স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে। মানবজাতির লোভের শিকার হচ্ছে দুর্বল ও অসহায়রা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।’
রোববার উইন্ডসোর ক্যাসলের সেন্ট জর্জ চ্যাপল থেকে সবার উদ্দেশে শুভেচ্ছা বার্তা দেন ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস। পাশাপাশি প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকেও স্মরণ করেন তিনি। এমনকি যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির সময় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, ‘বড়দিনে আমরা আমাদের কাছের মানুষকে স্মরণ করি। বছরের এ সময়টা পরিবারের যারা আমাদের সঙ্গে নেই, তাদের শূন্যতা অনুভব করি আমরা। আমার মায়ের বিশ্বাস ছিল মানবজাতির একাত্মতার ওপর। মানুষের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের একটি মাধ্যম।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই বড়দিনের আনন্দ উদ্যাপনে। শনিবার দেশটির রাজধানী কিয়েভের অপেরা থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় চমৎকার এক স্টেজ শোর। এতে স্ট্যান্ডআপ কমেডিসহ গানের মাধ্যমে দর্শককের মাঝে আনন্দ বিলিয়ে দেন অংশগ্রহণকারীরা।
এদিকে ইরাকের নিনভে প্রদেশের কারাকোস শহরেও বড়দিন উদ্যাপনে জড়ো হন বহু মানুষ। ইমাকুলেট গির্জায় ধর্মীয় সংগীতে অংশগ্রহণ করেন কয়েকশ স্থানীয় নাগরিক। অস্ট্রেলিয়ার বন্ডী সমুদ্রসৈকতে উদ্যাপিত হয় বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। সূর্যের আলোয় পরিবার-পরিজন মিলে বড়দিনের এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করাটাই স্থানীয়দের রীতি। অংশ নেন পর্যটকরাও। গেল বছর মহামারি করোনার কারণে উৎসবের আমেজ কিছুটা ম্লান হলেও চলতি বছর আগতদের উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেক বেশি।
বড়দিনের অন্যরকম এক উদ্যাপনে মেতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দারা। কোকোয়া সমুদ্রসৈকতে সার্ফিং করে আলাদাভাবে আনন্দ উদ্যাপন করেন আগতরা। আর টেক্সাসের এল পাসো শহরে বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে হাজার হাজার অভিবাসী ক্রিসমাসের প্রার্থনায় কামনা করেন নিশ্চিত এক ভবিষ্যতের। এ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশ নানা আয়োজনে বড়দিন উদ্যাপন করেছে।