১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিনিয়োগে অনাগ্রহ, কমছে বিনিয়োগ নিবন্ধন

দিন দিন কমছে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিবন্ধন কমার অর্থই হচ্ছে বিনিয়োগের আগ্রহ বা চাহিদা কমতে শুরু করা। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসের তুলনায় আগস্টে বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ৪৮ শতাংশ। আর এপ্রিলের তুলনায় কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বড় অঙ্কের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। এ অবস্থায় বিনিয়োগের আগ্রহ কমতে শুরু করার প্রবণতা ইতিবাচক নয়। বিনিয়োগ কমতে শুরু করলে কর্মসংস্থানসহ গোটা অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে কমে গেছে ঋণের চাহিদা। বাড়ছে অব্যবহূত টাকার পরিমাণ। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঋণ দিতে না পেরে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ ও আমানতের সুদ কমাচ্ছে। ঋণের সুদহার কিছুটা কমাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো এতোদিন উচ্চ হারে সুদ নিয়েছে। উদ্যোক্তারা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আর টিকে থাকতে পারছেন না। ফলে বিনিয়োগ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এখন ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ কমাচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ কমালেও যারা ইতিমধ্যে ঋণ নিয়েছেন তারা উচ্চ সুদ পরিশোধ ও নানা সমস্যায় বেশ চাপেই রয়েছেন।

বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ১২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার। এপ্রিলে বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। এরপর ব্যাপকভাবে কমতে থাকে বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ। মে মাসে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৯ হাজার ৬ কোটি টাকা। জুনে তা আরও কমে ৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর জুলাইয়ে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। আগস্টে বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই দেশে বিদ্যুতের অভাব রয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। তার ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে। কারণ, উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশকে গুরুত্ব দেয়। তাই যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হয়, তা দিয়ে বিনিয়োগ লাভজনক করা সম্ভব নয়। কোনো দেশে এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হয় না। তাই যে কোনো ঋণের সুদ কমাতে হবে। এখনও ঋণের সুদ অনেক বেশি।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে ঋণের চাহিদা কমায় উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ বাড়ছে। বাড়ছে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। তাই বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুদিন ধরে ঋণ ও আমানতে সুদহার কমাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতোদিন ব্যাংকগুলো ঋণের তুলনায় আমানতের সুদহার বেশি কমিয়ে আসছিল। তবে এখন ঋণ গ্রহণকে উত্সাহিত করতে ঋণের সুদ বেশি কমাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে ব্যাংকগুলো গড়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। জুলাইয়ে আমানত নিয়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ সুদে। তার আগের মাসে আমানতে গড়ে সুদ দিয়েছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে আগস্টে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ সুদে। আগের মাসে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর তার আগের মাস জুনে ঋণ বিতরণ করেছিল ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ সুদে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো সুদের হার কিছুটা কমালেও তা এখনো অনেক বেশি। এত সুদে বিনিয়োগ লাভজনক করা সম্ভব নয়। সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে আসলে উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন। তবে সুদ কমানোর পাশাপাশি অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করার দাবি উদ্যোক্তাদের। বিশেষ করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে বলে মনে করেন তারা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ