৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপির জাতীয় সম্মেলন নিয়ে ফখরুল, রিজভী সহ সিনিয়র নেতারা যা বললেন

[ad id=”28167″]ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ১৯ মার্চেই দলের জাতীয় সম্মেলন করতে চায় বিএনপি। প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিলেও ওইদিন সম্মেলন করে ফেলার বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। পছন্দসই জায়গা না পেলেও বিকল্প কোনো স্থানে, এমনকি প্রয়োজনে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কিংবা বনানীতে চেয়ারপারসনের কার্যালয় প্রাঙ্গণে হলেও সম্মেলন করার মানসিক প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানায় এসব সূত্র।

গতকাল রবিবার পর্যন্ত পছন্দসই জায়গা নিশ্চিত করতে না পারলেও সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ মহাসচিব পদ ঘিরে দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে একাধিক বলয় তৈরি হয়েছে। এসব বলয় ভেতরে ভেতরে নানা তত্পরতাও চালাচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি এই তত্পরতা লন্ডন পর্যন্ত বিসৃ্তত।

আসন্ন সম্মেলনে কে হচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব, দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম-জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কারা আসছেন; এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ-পদবি’র বিষয়ে ১/১১’র অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে এগোচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অবর্তমানেও যেন দলের ঐক্য অটুট থাকে, সেরকম বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিতদেরই এবার নেতৃত্বে রাখবেন তিনি।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কথিত ১/১১-এর সময়কার খারাপ অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছেই। প্রতিকূল পরিবেশ ও বিপর্যয়ের মধ্যেও যারা দলের ঐক্য ধরে রেখে সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম, নিশ্চয়ই সেরকম নেতারাই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

জানা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং মহাসচিব পদসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বণ্টনকে সামনে রেখে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা এবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর গতি-প্রকৃতিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রেখেছেন। বিশেষ করে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দুটির সম্ভাব্য সব ধরনের পরিণতির বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেও দলে যেন ভাঙন সৃষ্টি হতে না পারে এবং সময়-সুযোগ বুঝে দলের ভেতর থেকে কেউ যেন জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে না পারে— এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সেজন্য পদ-পদবি দেয়ার ক্ষেত্রে ‘যোগ্যতা’র চেয়েও বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে ‘বিশ্বস্ততা’কে।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতা জানান, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবার দলের কেন্দ্রীয় পদবি বণ্টনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং দলের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও দলের বাইরেও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে দলের উদারপন্থী নেতারা চান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-ই সম্মেলনের মাধ্যমে মহাসচিব হোন। তবে দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যদিও তরিকুল ইসলামের শারীরিক সুস্থতার প্রশ্নটিও সামনে আসছে। জানা গেছে, মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজের অনাগ্রহের কথা সত্তরোর্ধ্ব তরিকুল নিজেই ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে অবহিত করেছেন।

মির্জা ফখরুলকেই মহাসচিব হিসেবে দেখতে চান— দলের এমন নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের জন্য তার অনেক ত্যাগ আছে। মহাসচিব পদ নিয়ে নানামুখী তত্পরতার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহাসচিব পদ তার কাছে বড় নয়, পদের জন্য তিনি রাজনীতি করেন না, দলকে আরো শক্তিশালী করে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, সম্মেলনের জন্য পছন্দের জায়গা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ার কারণে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকগুলোও হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দপ্তর ও যোগাযোগ বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের ইচ্ছায় এসব ঘটছে। প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া নিজেও।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল  নোমান বলেন, আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, বিকল্প জায়গাও খুঁজছি। সরকার যতই বাধা দিক, তারপরেও যেখানেই হোক আমরা সম্মেলন করবই, এটাই আমাদের দলের সিদ্ধান্ত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ