আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আপাতত বাংলাদেশের দিকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে। সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিজিপি সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করে পালাতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করছে। এমনকি অনেক এলাকায় রোহিঙ্গাদের সৈন্যরা ত্রাণ দিচ্ছে বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। যদিও অন্য অনেক এলাকায় এখনো নৃশংসতা ও আগুন দেয়া থামেনি বলেও দাবি করা হচ্ছে।
রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য তুরস্ক সরকার ইতিমধ্যে ১ হাজার টন ত্রাণ পাঠিয়েছে। দেশটির প্রতিবেশী চীনও সেখানে প্রয়োজন হলে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তুরস্ক থেকে আসা ত্রাণগুলোই সেখানে বিতরণ করা হচ্ছে। কয়েকজন রোহিঙ্গা এক্টিভিস্টও ফেসবুকে সেখানকার সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণের ছবি দিয়েছেন। তবে তা কতটুকু সত্য তা যাচাই সম্ভব হয়নি।
এদিকে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দলের প্রধান মার্জুকি দারুসমান মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিধনযজ্ঞ খতিয়ে দেখতে চাইলেও তিনি তা পারছেন না। সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি জানার বিষয়ে সেদেশের সরকার সহযোগিতা করছে না। এখনো তিনি সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। যদিও মঙ্গলবারের ভাষণে সু চি বলেছিলেন, পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রবেশে তার সরকারের কোনো আপত্তি নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানে রোহিঙ্গাদের মাঝে সেনাদের ত্রাণ বিতরণের খবর কতোটা সত্য তা যাচাই করা মুশকিল। তবে সদ্য বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বলছেন, মংডু সদরের কাছাকাছি গ্রামগুলো থেকে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার নিয়ে পালাতে চাইলেও তারা পারছেন না। কারণ, সেখানকার সেনাবাহিনী তাদের কিছু হবে না বলে অভয় দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলছে, কিছু ত্রাণসামগ্রীও দিচ্ছে। আবার পাশের অনেক এলাকায় তারা সেনাদের বর্বরতার খবরও পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার হোয়াইক্যং পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মজনু মিয়া জানিয়েছেন, তাদের এলাকা থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে ভয় পেয়ে তারা রবিবার বাংলাদেশের দিকে রওয়ানা দেন। আসার সময় কিছু সেনা তাদের বাধা দেয়। তাদের দুটি প্যাকেট দিতে চায়। তবে তারা প্যাকেট নেননি। বলেছেন- আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। এভাবে সেনাদের ফাঁকি দিয়ে তারা চলে আসেন।
একই দিন উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে আসা বড় গজিরবিল এলাকার মোহাম্মদ খলিল জানিয়েছেন, সৈন্যরা তাদের একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি যেতে বলেছে। গত দু’-একদিনে আসা বেশ কজন রোহিঙ্গা এই ধরনের দাবি করেছেন। তবে তাদের কারো কাছে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, সারা বিশ্বের সমালোচনায় পড়ে মিয়ানমারের সৈন্যরা সেখানে আইওয়াশের জন্য ত্রাণ দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িতে থাকতে অভয় দিচ্ছে। কিন্তু অনেক এলাকাতেই তারা এখনো পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে আগুন দেয়ার খবর পাচ্ছেন।
রাখাইনে খবর নিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট জানিয়েছেন যে, প্রদেশটির সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ও গরিব বাসিন্দাদের মধ্যে চাল, লবণসহ বেশকিছু শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করছে।