[english_date]

বরফের গুহায় সম্পূর্ণ অপরিচিত প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সন্ধান

অ্যান্টার্কটিকার বরফের গুহায় সম্পূর্ণ অপরিচিত প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সন্ধান মেলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রস আইল্যান্ডের আগ্নেয় পর্বত মাউন্ট ইরেবাসের নিচে বরফাচ্ছাদিত গুহায় প্রাপ্ত ডিএনএ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী গুহা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষা করে তাজ্জব বনে যান। পৃথিবীর জানা কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর সঙ্গে এর মিল খুঁজে পান না।
বরফ রাজ্য অ্যান্টার্কটিকার আগ্নেয় পর্বত মাউন্ট ইরেবাসের আশেপাশের গুহাগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গরম বাষ্প বরফ ভেদ করে বেরিয়ে আসার কারণে গুহাগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী দলের প্রধান সিডওয়েন ফ্রেসার বলেন, ‘গুহাগুলোর ভেতরে তাপমাত্রা আসলেই খুব বেশি। কোনো কোনো গুহার তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। কেউ একজন শুধু একটা টি শার্ট পরেই স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে, একটুও শীত লাগবে না। গুহাগুলোর মুখে এসে পড়া সূর্যরশ্মি বরফে প্রতিফলিত হয়ে গুহার অনেকটা ভেতরে পর্যন্ত চলে যায়।’ সব মিলিয়ে সেখানে প্রাণীর জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ আছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি পোলার বায়োলজি নামক জার্নালে প্রকাশিত অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার ভিক্টোরিয়া ল্যান্ড অঞ্চলের তিনটি আগ্নেয়গিরি থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ শেষে মাউন্ট ইরেবাসের গুহা থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন। সব জায়গার মাটিতেই তারা শেওলা, ছত্রাক, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াসহ পরিচিত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব পেলেও মাউন্ট ইরেবাসের গুহা থেকে সংগৃহীত মাটিতে পান এমন সব ডিএনএ’র অস্তিত্ব যেগুলোর সঙ্গে চেনা কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের ডিএনএ মেলে না। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী ফ্রেসার বলেন, গবেষণার ফলাফল আমাদের চমকে দিয়েছে। এতে অ্যান্টার্কটিকার বরফের তলে নতুন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাউন্ট ইরেবাসের মত অর্ধজমাট অন্য আগ্নেয় পর্বতগুলোর গুহাতেও এ রকম জীববৈচিত্র্যের সন্ধান মিলতে পারে তা তাদের কল্পনায় ছিল না।। তাদের মতে, প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা অ্যান্টার্কটিকার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলেও যেটুকু জেনেছি তা যথেষ্ট নয়, জানার এখনো অনেক বাকি। গুহাগুলো থেকে প্রাপ্ত নমুনা পরীক্ষা করে এমনটাই মনে হচ্ছে।

তবে গবেষকরা এটাও বলছেন, সামান্য কিছু নমুনা পরীক্ষা করেই নতুন প্রাণীজগৎ আবিষ্কারের কথাটা হয়তো কারো কাছে অতি কল্পনাবিলাস বলে মনে হতেই পারে। তবে ডিএনএ’র নমুনাগুলো থেকে সম্পূর্ণ অনাবিষ্কৃত এক জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা যে দেখা দিয়েছে, এটা জোর দিয়েই বলা যায়। লরি কনেল নামে গবেষকদলের একজন বলেন, ‘এরপর আমাদের কাজ হবে গুহাগুলোর ভেতরে গিয়ে ভালো করে তল্লাশি চালিয়ে দেখা- সেখানে জ্যান্ত কোনো প্রাণী পাওয়া যায় কিনা। যদি তারা থাকে, তাহলে এক নতুন জগতের দ্বার উন্মোচিত হবে।’ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ‘জুরাসিক পার্ক’ এর দিকেই যাচ্ছে কিনা কে জানে। নিউজউইক।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ