আর্থনিউজ২৪: ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রধান কার্যক্রম স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের জন্য ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও থ্যালেস এলেনিয়ার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যঁ লইক গ্যাল চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা চূড়ান্তের দিকে এগিয়ে গেল।
চুক্তি অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দু’টি স্টেশন পরিচালনা ও ঋণের ব্যবস্থা করবে থ্যালেস এলেনিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশকে দাবায়া রাখা যাবে না। আজকে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭টি স্যাটেলাইট মালিক দেশের ক্লাবে প্রবেশ করল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে গেল।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর আমাদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশেই থেকে যাবে। আর মাত্র ৬-৭ বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের পুরো অর্থ উঠে আসবে। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এই ইতিহাসের অংশ হতেই আমি এই অনুষ্ঠানে এসেছি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফিয়া ওবার্টও।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনে বাংলাদেশ ইতিহাসের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিল। এই স্যাটেলাইট একটি আঞ্চলিক স্যাটেলাইট হিসেবে কাজ করবে। তারপরও সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও এর আওতায় আসবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হবে।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী জ্যঁ লইক গ্যাল বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বে এখন বিস্ময়। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা অংশীদার হতে পেরে গৌরববোধ করছি।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফিন্যান্সিং এর মাধ্যমে সংকুলান করা হবে।
ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের আওতায় এ বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ থেকে ২১৮.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনার ইন্টারন্যাশনাল।