৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফোন কি আসলেই সম্পর্ক নষ্টের জন্য দায়ী?

অফিস শেষে স্বামী বাসায় ফিরেছেন। রাতের খাওয়া সেরেই স্ত্রী সারাদিনের জমিয়ে রাখা সব কথা বলতে শুরু করলেন। স্বামী ভাবলেন, ‘কথা চলুক। পাশাপাশি আমিও ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকি!’
কিংবা ধরুন, অফিসের কাজের ফাঁকে দুই সহকর্মী চা খেতে গিয়েছেন। একজন গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলেও অন্যজনের মনটা পড়ে আছে মোবাইলে।
দৃশ্যগুলো আমাদের সবার চেনা। দু’জন পাশাপাশি বসে থাকা মানুষের একজন মোবাইলের দিকে মুখ গুঁজে আছেন! অপরজনের কাছে তখন এই বার্তাই পোঁছায় যে, আপনার শরীরী উপস্থিতির চেয়ে ঐ মানুষটির কাছে ফোনটাই বড়; ফোনের ভার্চুয়াল জগত তাঁর কাছে বেশি আকর্ষণীয়।
এভাবে সম্পর্কে অজান্তে একটা মান-অভিমানের জায়গা তৈরি হয়। অভিমানে ঐ মানুষটি হয়তো কথা শেষ না করেই আপনার সামনে থেকে একসময় উঠে চলে যাবে। তাঁর কাছে আস্তে আস্তে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে আসবে।
ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘ফাবিং’ (Phubbing)। ফোন (Phone) এবং স্নাবিং (Snubbing) এ দুই শব্দ যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে ফাবিং শব্দটি। ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে মনোযোগ দিতে গিয়ে কেউ যখন সামনে থাকা মানুষটিকে অবহেলা করে, তখন সেটি হয়ে ওঠে ফাবিং।
একটি বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশ হিসেবে ২০১২ সালে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। করোনা মহামারির সময় প্রচুর মানুষকে ‘আইসোলেটেড’ থাকতে হয়েছিল। মানুষ তখন ফাবিং টার্মটির সাথে নতুন করে পরিচিত হয়।
শুধু রোমান্টিক বা দাম্পত্য সম্পর্কই নয়; বন্ধুত্ব, মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, সহকর্মীর সঙ্গে আচরণ সব কিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে ফাবিং।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াট্রির সহকারী অধ্যাপক রায়ান সুলতান বলেন, ‘রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফাবিংয়ের ফলে দ্বন্দ্ব এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। আবার বন্ধু বা সহকর্মীদের কেউ কেউ নিজের প্রতি একধরণের হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন।’
প্রশ্ন জাগে, কেন মানুষের মধ্যে ইদানিং ফাবিংয়ের প্রবণতা এত বেড়েছে! সামনে উপস্থিত রক্ত-মাংসে গড়া মানুষটির চাইতে কেন মুঠোফোনের স্ক্রিন আমাদের মনোযোগ বেশি টানতে সক্ষম!
এর উত্তরও দিয়েছেন সুলতান। ডিজিটাল ডিভাইস থেকে উদ্ভূত ডোপামিনের জন্য আমরা এর প্রতি বেশি সব সময় আকর্ষণ বোধ করি।
ডোপামিন হরমোন আমাদের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি যোগান দেয়। সামাজিক মাধ্যম থেকে যখন কোনো নোটিফিকেশন আসে, কেউ যখন আমাদের ছবিতে একটি রিয়্যাক্ট দেয়, বা পোস্টে লাইক প্রদান করে, তা আমাদের মধ্যে এক ধরনের পুরস্কার (রিওয়ার্ড) প্রাপ্তির অনুভূতি এনে দেয়।
কোনো কাজে আনন্দ পেলে, সেই কাজ পুনরায় করার অনুপ্রেরণা যোগাতেও ভূমিকা রাখে ডোপামিন। ফলে অনেকটা অজান্তেই আমাদের চোখ ফোনে সেঁটে থাকে।
রোমান্টিক সম্পর্কে ভাঙন
ফাবিংকে কোনোক্রমেই হালকাভাবে নেয়ার উপায় নেই। ক্রমাগত ফাবিংয়ের ফলে ব্যক্তির মনে একসময় সঙ্গীর জন্য অসন্তোষ তৈরি হয়। সুলতানের ভাষ্যে, ‘আপনার সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার ফিডের জন্য বা অগুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল কার্যক্রমের জন্য আপনাকে অবজ্ঞা করবে সেটি কোনোভাবেই সঙ্গত হতে পারে না।
অন্যদিকে যিনি নিজে ফাবিং করছেন, তাকেও সচেতনভাবে মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। দিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় তিনি ফোন না চালানোর বা ‘নো ফোন জোন’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন।
আরেকটি কার্যকরী উদ্যোগ হলো, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ইমেইল ইত্যাদি সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের নোটিফিকেশন ‘মিউট’ করে রাখা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ