৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফেসবুক পোস্টের রিচ কমার কারণ, বাড়াবেন যেভাবে

ফেসবুক পোস্টের রিচ কমে যাওয়া মানে কোনো ছবি, ভিডিও বা স্ট্যাটাস ফ্রেন্ড ও ফলোয়ারদের ফিডে না পৌঁছানোকেই বোঝানো হয়। এর ফলে লাইক, কমেন্ট আগের তুলনায় কমে যায়। ২০২৩ সাল থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এমন অভিযোগ করছেন। তবে জেনে অবাক হবেন যে, ফেসবুক নিজেই রিচ কমিয়ে দেয়।

যেসব কারণে ফেসবুক রিচ কমিয়ে দেয়

ফেসবুক প্রতিনিয়ত অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে নিত্যনতুন ফিচার নিয়ে আসে। আর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির এসব পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবহারকারীরা জানতেই পারেন না। এখানে দুটি প্রশ্ন সামনে আসে। প্রথমটি, ফেসবুক অ্যালগরিদম কী? দ্বিতীয়টি, কোন পোস্ট কত রিচ হবে, তা এই অ্যালগরিদম কীভাবে নির্ধারণ করে?

ফ্রেন্ড-ফলোয়ারদের ফিডে একটি পোস্ট কতটুকু রিচ করবে তা ফেসবুক ৪টি প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করে। যাকে কনটেন্ট বা পোস্ট র‌্যাংকিং বলে। সেগুলো হলো-

১. কনটেন্টের উৎস: পোস্ট করা কনটেন্টটি ব্যবহারকারীর নিজের তৈরি কি না এবং কনটেন্টটির প্রকৃত উৎস কী? এসব দেখে ফেসবুক। ব্যবহারকারীর ফিডে ফেসবুক সেসব পোস্টই দেখায়, যেসব পোস্ট ব্যবহারকারীর ফেসবুক ফ্রেন্ড কিংবা তারা যাদের ফলো করে তাদের। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারী যেসব পেজ ফলো করে, সাধারণত সেসব কনটেন্টই তার ফিডে বেশি দেখতে পায়।

২. কনটেন্টের ধরন: কনটেন্টটি লাইভ, ভিডিও, ছবি নাকি স্ট্যাটাস? ব্যবহারকারী যে ধরনের কনটেন্ট বেশি দেখে বা ইন্টার‌্যাক্ট করে (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার), ওই ধরনের পোস্ট তার ফিডে বেশি দেখায় ফেসবুক। ব্যবহারকারী যদি ভিডিও বেশি দেখে, ফেসবুক তার ফিডে বেশি বেশি ভিডিও দেখাবে, যদি ছবি বেশি দেখে, তাহলে ছবি দেখাবে।

৩. কনটেন্ট এনগেজমেন্ট: বন্ধুতালিকায় বা পেজে বেশি এনগেজমেন্ট হওয়া পোস্টগুলোই ব্যবহারকারীর ফিডে বেশি দেখায়। যেমন বন্ধুতালিকায় থাকা বন্ধুদের যেসব পোস্টে এনগেজমেন্ট বেশি, সেসবই ব্যবহারকারীর ফিডে বেশি দেখাবে।

৪. কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড: পোস্ট শেয়ারের ক্ষেত্রে ফেসবুকের একটি সুর্নির্দিষ্ট ও লিখিত নির্দেশিকা আছে (ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস)। এমন কোনো পোস্ট, যেটি এই নির্দেশিকা অমান্য করে, সেসব পোস্ট ফিডে কম দেখাবে। ফেসবুকের ভাষায় যেটিকে বলে ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস ভায়োলেশন’। নির্দেশিকাটি ফেসবুকের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেওয়া আছে।

অ্যালগরিদম অনুযায়ী, চলতি বছর ফেসবুক রিচের ক্ষেত্রে লাইভ ভিডিও, রিলস, ভিডিও, ছবিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। অর্থাৎ এ ধরনের কনটেন্টের চাহিদা বেশি এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি বেশি পৌঁছাবে। এছাড়াও আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফেসবুক সব সময় চায়, ব্যবহারকারীরা প্রকৃত, নির্ভরযোগ্য ও তথ্যপূর্ণ কনটেন্ট শেয়ার করুক।

ফেসবুক পোস্টের রিচ বাড়াতে করণীয়

কনটেন্টের মান ও যাচাই: প্রোফাইল বা পেজে কী ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করছেন, তা খেয়াল রাখুন। বন্ধুতালিকা ও ফলোয়ারের চাহিদা অনুযায়ী কনটেন্ট শেয়ার করুন। যেকোনো তথ্য, ছবি, ভিডিও শেয়ার করার আগে সেটির সত্যতা যাচাই করা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে আমাদের মধ্যে অনেককেই ‘ফোমো’ বা ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’ সমস্যায় পেয়ে বসেছে। অর্থাৎ আমরা অনেকেই কিছুক্ষণ ফেসবুকে না থাকলে মনে করি, ‘আরে, আমি তো ফেসবুকে নাই, এখন কী না কী হয়ে যাচ্ছে! মানুষ না জানি কত কিছু শেয়ার করে কত লাইক-কেমন্ট-শেয়ার পাচ্ছে!’ অর্থাৎ এই ফোমোর কারণে অনেকেই যাচাই–বাছাই না করেই কিছু একটা পোস্ট করে বসেন। এ ধরনের পোস্ট চিহ্নিত করার জন্য ফেসবুক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দিয়েছে, যাদের বলা হয় ‘ফ্যাক্ট চেকার’। তাই কিছু পোস্ট করার আগে তথ্য যাচাই অত্যন্ত জরুরি। তথ্য যাচাইয়ের জন্য গুগল, কোনো সংবাদমাধমের খবর হলে সেই প্রতিষ্ঠানের ভ্যারিফায়েড পেজ বা ওয়েবসাইট, ছবির ক্ষেত্রে গুগল লেন্স, রিভার্স ইমেজ সার্চ ইত্যাদি ব্যবহার করা।

প্রোফাইল বা পেজ হেলথ: পোস্ট রিচ ও এনগেজমেন্ট বেশি হওয়ার জন্য ব্যক্তির প্রোফাইল বা পেজের ‘স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা’ বজায় রাখা জরুরি। কিছু অসাধু ব্যক্তি বা সংগঠন ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়ায়। এ ধরনের পোস্ট শেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ভুয়া প্রোফাইলকে বন্ধুতালিকায় যুক্ত করা যাবে না। ফেসবুক অ্যালগরিদম এ ধরনের ভুয়া তথ্য বা বন্ধুতালিকায় থাকা ভুয়া প্রোফাইল নিয়মিত চিহ্নিত করে এবং সেসব প্রোফাইল বা পেজের রিচ কমিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা প্রবাদ ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সর্বনাশ’ কিংবা ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ একেবারে জুতসই।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ