১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রেমিকার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে চলেই গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, যিনি প্রেমিকার চিঠি আর ছবি বুক পকেটে রেখে কাঁটিয়ে দিলেন সাড়া জীবন। অবশেষে ৮৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেসউদ্দিন আহমেদ। মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত এই মুক্তিযোদ্ধা গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিনকে ও তার প্রেমের গল্প নিয়ে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। যার জন্য আজীবন চিরকুমার তিনি। ফুফাতো বোন জোহরার সঙ্গে প্রেম ছিলো তানেসের।

 

প্রেমের টানে জোহরার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই সন্ধ্যায় তানেসকে মেঘনা নদী পার হতে হতো নৌকায় করে। দেখা করে আবার নৌকায়ই ফিরতেন তিনি। একদিন তাদের সন্ধ্যায় দেখা হওয়ার কথা। আগে থেকেই জোহরাকে খবর দেওয়া হয়েছিলো। সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর ওপারে জোহরা অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে পারাপারের জন্য নেই কোনো নৌকা। কীভাবে ওপারে যাবেন তানেস?

উপায় না পেয়ে উত্তাল জোয়ারের মধ্যে সাঁতার কেটে মেঘনা নদী পার হয়েছিলেন তিনি। এই পাগলামির কারণে জোহরার বকাও খেয়েছিলেন তিনি। তাতে কী, এতে দিনে দিনে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছিলো।

১৯৬৭ সালের কথা- শয্যাশায়ী বাবার পাশে বসে জোহরা তরুণ তানেসকে কথা দিয়েছিলেন, কোনদিনও ছেড়ে যাবেন না। এভাবেই ঘনিয়ে এল মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১। চারদিকে যুদ্ধের ডাক। সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তানেস। এ কথা শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন জোহরা। প্রথমে আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু পরে সম্মতি দিয়েছিলেন ঠিকই।

জোহরাকে রেখে যুদ্ধে গেলেন তানেস। কলকাতা-আগরতলা থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরই মধ্যে খবর এল, জোহরা আর তার বাবাকে দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে হত্যা করেছে। এই খবর শুনে তানেস অনেকটা হতাশ হয়েছিলেন।

অবশেষে যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তানেস গ্রামে ফিরে আসেন ঠিকই। কিন্তু জোহরা ছিলেন না। তাই জোহরার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে শুরু করেন। গত ৫৪ বছর যাবৎ প্রেমিকার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে ছিলেন তিনি।

গজারিয়াবাসীর কাছে সুপরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো উপজেলায়।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাদ আছর উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ইসমানিরচর গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার। পরে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয় তানেস উদ্দিনকে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘তানেস উদ্দিন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন, উনারা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।’

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ