বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তিতে ইচ্ছুক কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকার বাধ্যবাধকতায় পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হলে কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকা বাধ্যতামূলক। পাবলিক ইস্যু বিধিমালা সংশোধনীর মাধ্যমে তা ২০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
জানা গেছে, ১০ নভেম্বর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০০৬-এর সংশোধনী খসড়া অনুমোদন দিতে যাচ্ছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সে সংশোধনীতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম আবশ্যক পরিশোধিত মূলধন কমানো হচ্ছে।
বিএসইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কমিশনে সংশোধনীটি অনুমোদনের পর চলতি মাসের মধ্যেই জনমত যাচাই সম্পন্ন হবে। এর পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে আইপিওর খসড়া প্রসপেক্টাস সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া প্রসপেক্টাসে কোম্পানি সম্পর্কে আরো বেশি তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের লক্ষ্যে আইপিওতে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, আগামীতে কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) প্রিমিয়াম দাবি করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতেই বাজারে আসতে হবে বলে কমিশন নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ কারণেই বুক বিল্ডিং পদ্ধতিটি আরো সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিশোধিত মূলধনের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আনার এটিই অন্যতম কারণ। এর বাইরে ন্যূনতম শেয়ার বাজারে ছাড়া, মূল্য নির্ধারণ, নিলাম প্রক্রিয়াসহ বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে।
জানা গেছে, পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীর খসড়ায় স্থির মূল্য ও বুক বিল্ডিং উভয় পদ্ধতিতে ইস্যুয়ার কোম্পানির প্রসপেক্টাসে অনেক বেশি তথ্য দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির ইতিহাস, পরিচালকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, মামলা কিংবা অন্য কোনো আইনি বিষয় ছাড়াও ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্যও থাকতে হবে। সংশোধনীতে মূলত উন্নত দেশের মতো আইপিওর প্রসপক্টাসে কোম্পানির জন্য আরো বেশি তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
কোম্পানির খসড়া প্রসপেক্টাসে দেয়া তথ্যের সত্যতা বিষয়ে ইস্যু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান যে স্বচ্ছতার সনদ (ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেট) দেয়, সেটির যথার্থতা নিশ্চিতে আরো বেশি তথ্য দিতে হবে। শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার শেষ হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক রেখে ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। তবে এজন্য ইস্যু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের ফিও বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও আরো বেশি জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে আইপিওর কোটা পদ্ধতিও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আইপিও শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের লক্ষ্যে আইপিওর বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আইপিওতে প্রথমবারের মতো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে। বর্তমানে কোনো আইপিও সাইজের ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের, ১০ শতাংশ অনিবাসী বাংলাদেশী, ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড ও বাকি ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখার বিধান রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আইপিওর ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কোম্পানির আইপিও অনুমোদনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা গেছে। সম্প্রতি শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদনের পরও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও স্থগিত করে বিএসইসি। অবশ্য পরিশোধিত মূলধনের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আপত্তির কারণে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আইপিও কার্যক্রম স্থগিত রাখে বিএসইসি। এর আগে অনুমোদন দিয়েও অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে অ্যাপোলো ইস্পাতের আইপিও স্থগিত করে আবার যাচাই-বাছাই করা হয়। এসব কারণে আইপিও অনুমোদনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেও এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। অবশ্য এরই মধ্যে তালিকাভুক্তি প্রবিধানমালা ২০১৫ (লিস্টিং রেগুলেশনস) সংশোধনীর মাধ্যমে আইপিও অনুমোদন চাওয়া কোম্পানির বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্যালোচনা বা অভিমত প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আইপিওর খসড়া প্রস্তাবের ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদন বা সুপারিশ প্রদান স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য এত দিন ঐচ্ছিক ছিল। জানা গেছে, আইপিওর আবেদন করা কোম্পানির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলকের বিষয়টি এ প্রবিধানমালার সংশোধনীতে রাখার প্রস্তাব বিবেচনা করেনি কমিশন। তবে পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে অনাপত্তিপত্র গ্রহণের বিষয়টি রাখা হবে বলে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে কমিশন।
এরই মধ্যে আইপিওর চাঁদা গ্রহণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে বিএসইসি। ব্যাংকের পরিবর্তে এখন ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আইপিও আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনতে যোগ্যতা নির্ধারণ করে ৩৬টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্যানেল অডিটর করেছে বিএসইসি। এর বাইরে অন্য কোনো নিরীক্ষকের প্রতিবেদন গ্রহণ করছে না শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।