সবুজ মণ্ডল , বিশেষ প্রতিনিধি
আর্থনিউজ২৪
যুক্তরাজ্যের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের একদল গবেষক সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন কৃত্রিম পেশি। মানবদেহের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পেশির মতোই এরা উদ্দীপনা নিতে পারে এবং উদ্দীপনার মাধ্যমে সংকোচিত ও প্রসারিত হতে পারে।মানবদেহের ভ্রুণীয় কোষস্তর গঠনের সময় একধরনের বিশেষ কোষগুচ্ছ তৈরী হয় আর এই বিশেষ কোষগুচ্ছকে বলা হয় মায়োজেনিক টিস্যু।ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষকদল প্রথম বারের মতো প্রাইমারি মায়োজেনিক পেশিটিস্যুকে কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে তৈরী করতে সক্ষম হন।গবেষকদল সর্বপ্রথম কোন দাতার শরীর থেকে এই কোষগুচ্ছকে সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তিতে এদের টান টান করে সিলিকোনের পাতলা স্তরের মধ্যে রাখেন।
এভাবে দাতার শরীর সংগ্রহকৃত প্রাকৃতিক টিস্যুকে একশ বারের মতো বৃদ্ধি করা যায়।তারা গবেষণার মাধ্যমে দেখেন যে,দাতার শরীর থেকে নেয়া প্রতি ৫০ মিলি গ্রাম পেশি থেকে ৫ গ্রাম কৃত্রিম কিন্তু কার্যকর পেশি টিস্যু তৈরী করা সম্ভব।
গবেষকদল বিশেষভাবে তৈরী এই পেশিটিস্যুর নাম দেন “বায়ো-আর্টিফিশিয়াল টিস্যু “, বাংলায় যাকে আমরা “কৃত্রিম-জৈব কলা” ও বলতে পারি। গবেষকদলের প্রধানদের একজন হলেন লরেন মেডেন।তিনি পুরো দলের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন,প্রাণীর শরীর থেকে এই কৃত্রিম পেশি পরীক্ষাগারে তৈরী করতে গিয়ে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।মানবদেহের পেশি গুচ্ছের সাথে সুনিপুণভাবে কাজ করার জন্য আমাদের আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে এবং তাতে আরো বছর খানেকের মতো সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে ন্যাশনাল তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পেঁয়াজের মত নিত্যপণ্য থেকেও তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন কৃত্রিম পেশি। এ উদ্ভাবন রোবটিকস ও ন্যানোটেকনোলজি গবেষণাকে আরো এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর পিটিআই। কৃত্রিম পেশি আগেও তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেগুলোয় নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ছিল। ওগুলো কেবল একদিকেই বাঁকানো যেত। পেঁয়াজ থেকে তৈরি পেশিতে এ দুর্বলতা থাকছে না।
নতুন প্রযুক্তির এ কৃত্রিম পেশি যেদিকে ইচ্ছে বাঁকানো যায়, প্রয়োজনমতো সংকোচন-প্রসারণও করা যায়। এ গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দেন তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ওয়েন-পিন শিহ। তাকে সহায়তা করেন একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিয়েন-চুন চেন। তারা বুঝতে পারেন, পেঁয়াজের বহিঃত্বকের ঠিক নিচের স্তরটি থেকেই কাঙ্ক্ষিত পেশি তৈরি সম্ভব। পেঁয়াজের বাইরের আবরণের ঠিক নিচে যে পাতলা ও স্বচ্ছ অংশ রয়েছে, তা বেশ নমনীয় কিন্তু দৃঢ়। এর জাফরিসদৃশ গঠনই মূলত বিজ্ঞানীদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু তৈরির পথ দেখায়। এ বিষয়ে অধ্যাপক ওয়েন-পিন বলেন, ‘মাইক্রো-স্ট্রাকচার তৈরির প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। চাহিদামাফিক বাঁকানো সম্ভব হয়, এমন উপাদান খুঁজতে চেষ্টা করি আমরা। একপর্যায়ে আমরা বুঝতে পারি, পেঁয়াজের কোষের বিশেষ গঠন আমাদের পথ দেখাতে পারে।’ গবেষকরা বিভিন্ন মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে কৃত্রিম পেশির সংকোচন-প্রসারণ ঘটান। এ উদ্ভাবনের প্রয়োগ দেখাতে তারা দুটি কৃত্রিম পেশির একটি চিমটা তৈরি করেন; যেটি একটি কাপড়ের তৈরি বল তুলতে সক্ষম হয়। বিদ্যুত্প্রবাহ কমালে এ পেশির সংকোচন ঘটে, অন্যদিকে তা বাড়ালে হয়
প্রসারণ।