ভারত-নেপাল সীমান্তে অবরোধকারীদের ওপর নেপাল পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। নেপালের নতুন সংবিধানের বিরুদ্ধে চলমান অবরোধ ভাঙতে গতকাল সোমবার পুলিশ গুলি চালায়। নিহত ব্যক্তির নাম আশীষ রাম (১৯)। তিনি নেপালসংলগ্ন বিহার রাজ্যের সীমান্ত শহর রাক্সাউলের বাসিন্দা। খবর এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকালই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে এ ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করা হয়েছে। তবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের ব্যাপারে নাক না গলানোর জন্য ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
রাজধানী কাঠমান্ডুর দক্ষিণে বীরগঞ্জ শহরের সীমান্তে কাস্টমসের তল্লাশিচৌকিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। গতকাল ভোরের দিকে পুলিশ সেখানে থাকা ঘুমন্ত অবরোধকারীদের উঠিয়ে দিতে চেষ্টা করে। পরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে নতুন সংবিধানের বিরোধিতা করে মদেশীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা অবরোধ সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তৈরি তাঁবু পুড়িয়ে দেয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে চলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয়দের অবরোধের কারণে বীরগঞ্জ সীমান্তের মৈত্রী সেতু দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে অন্তত ২০০ খালি ট্রাক নেপালের অংশে পড়ে থাকে। ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনতেই ট্রাকগুলো অপেক্ষা করছিল। আবার ভারত সীমান্তে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারবাহী শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। অবরোধের কারণে ভারতীয় অংশে ট্রাকের ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়
।
পুলিশ জানায়, পণ্য চলাচল স্বাভাবিক করতে অবরোধকারীদের ওপর পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে আশীষ রামের মাথায় গুলি লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। ওই ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করে। সংঘর্ষের সময় নেপাল পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ফোর্সের আট সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
নেপাল পুলিশের মুখপাত্র কমল সিং বলেন, পুলিশ অবরোধকারীদের সরে যেতে বললেও তারা সাড়া দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালায়। এতে এক ভারতীয় নাগরিক আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
সংখ্যালঘু মদেশীয়রা মূলত নেপালের দক্ষিণের সমতলের বাসিন্দা। তাদের ধারণা, নতুন সংবিধানে যেভাবে নতুন সাত রাজ্যের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে, তা তাদের রাজনৈতিকভাবে আরও প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেবে। নতুন সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে দেশটিতে। অবশ্য এরই মধ্যে নেপালে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়েছে।
গত রোববার মদেশীয়দের সঙ্গে নতুন সংবিধান নিয়ে সরকারের আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভেঙে যায়। তবে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী কমল থাপা বলেন, আলোচনা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছিল। নতুন রাজ্যের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, মদেশীয়দের আরও অধিকারসহ নানা দাবিতে এই আলোচনা হয়। মদেশীয়রা নতুন সংবিধানের দাবিতে বিক্ষোভে নিহত ব্যক্তিদের শহীদের মর্যাদাও দাবি করেছে।