নিরাপত্তার কারণে ঢাকা সফর বাতিল করেছে আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্পের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম ও গ্যাপ। প্রতিষ্ঠান দুটির নির্বাহীরা এ মাসে তাদের ঢাকা সফর বাতিল করেছেন। বাংলাদেশে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর তারা সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে বাংলাদেশের ২৫০০ কোটি ডলার মূল্যের গার্মেন্ট রপ্তানি খাতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা বলছেন, বছরের শেষে ক্রিসমাস মওসুমের অর্ডারের সময় তারা এ ধরনের ঘটনা আশা করেননি। ইসলামিক স্টেটের দাবি করা হামলাগুলো বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে চাপ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে এ বছর দুর্বৃত্তরা চার ব্লগারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর বিদেশী নাগরিকদের ওপর হামলায় বিদেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিজিএমইএ এর প্রধান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘৫ দিনের ব্যবধানে দুই বিদেশী হত্যার পর আমাদের পশ্চিমা ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিছু ক্রেতা তাদের সফর বাতিল করেছে। ব্যবসার জোয়ারের এ সময়টিতে তাদের আরও অর্ডার দেয়ার কথা ছিল।’
শহিদুল্লাহ আজিম নামের একজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, তার একজন ক্রেতা তাকে স্যাম্পল নিয়ে দুবাই যেতে বলেছেন। শহিদুল্লাহ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড সিয়ার্স, লবলোস এবং পেরি এলিসের কাছে রপ্তানি করে থাকেন। আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অপর নির্বাহীরা তাদের বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তাদের সরকারের দেয়া সতর্কবার্তার কারণে তারা ঢাকা সফর করতে পারছেন না।
এইচএন্ডএমের মুখমাত্র অ্যানা এরিকসন বলেন, আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। একইসঙ্গে আমরা যথাযথ নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এ পরিস্থিতি নিয়ে তারা অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছেন বলে জানান অ্যানা। মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের প্রতিষ্ঠান সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর বন্ধ করে দেয়। এরপর আবার তারা সফর শুরু করেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র। তিনি আরও বলেন, এতে ব্যবসায়িক অর্ডারগুলোতে কোন প্রভাব পড়েনি। সফর পরিকল্পনায় পরিবর্তন নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে গ্যাপ।
টেসকো জানিয়েছে তারা বাংলাদেশে সফর বন্ধ করেনি তবে তাদের কর্মীদের সতর্ক থাকতে এবং সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছে। ইউনিকলো ব্রান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান জাপানের ফাস্ট রিটেইলিং জানিয়েছে, তারা এ মাসে জাপানিজ কর্মীদের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে। একইসঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হতে কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে, ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় রাতের বেলায় টহল দেয়ার জন্য আধাসামরিক সেনাদের নিয়োজিত করেছে বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশে ইসলামী স্টেটের সক্রিয়তার দাবি উড়িয়ে দিয়ে বুধবার বলেন, হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কাছাকাছি পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব হামলার ঘটনা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। হত্যাকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে নিম্ন মজুরির অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে থাকে। আর কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তাদের কূটনীতিকদের গতিবিধি সীমাবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বৃটেন আরও হামলার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। আর বাংলাদেশে ক্রিকেট সফর বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সরকার ইসলামিক স্টেটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে হামলাগুলোকে দেশের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার দায় চাপিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর। বিরোধীরা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ঢাকা ভিত্তিক এক গার্মেন্ট রপ্তানিকারক বলেন, বিদেশীরা যে এলাকায় থাকেন সরকার সেখানে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। পুলিশ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। আর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। ব্যবসা ভাল চলছে। কিন্তু কোন বিদেশী নাগরিকের ওপর যদি আরেকটি হামলা হয় তাহলে তা এ খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। শহিদুল্লাহ আজিম আরও বড় ধরনের প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ইসলামিক স্টেট ইস্যু যদি লম্বা সময় ধরে বিদ্যমান থাকে তাহলে এটা শুধু আমাদের ব্যবসা ক্ষতি করবে তা নয়, এটা আমাদের দেশের ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করে দেবে। তিনি আরও বলেন, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং বাংলাদেশ নিরাপদ বিশ্বকে এ বার্তা দিতে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।