১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নাটকীয়তা শেষে রদ্রিই জিতলেন ব্যালন ডি’অর

ফুটবল বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পুরস্কার ব্যালন ডি’অরের উন্মাদনায় চূড়ান্ত সিলমোহর পড়লো। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন না পাওয়ার গুঞ্জন এবং পুরো রিয়াল মাদ্রিদ দলের প্যারিসের এই অনুষ্ঠান বয়কট নিয়ে নাটকীয়তা চলছিল সন্ধ্যা থেকে। স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রিগো হার্নান্দেজের হাতেই ব্যালন ডি’অর ওঠার মাধ্যমে যার ইতি ঘটেছে। তাকে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই গোল্ডেন বল তুলে দিয়েছেন ১৯৯৫ ব্যালনজয়ী ফরোয়ার্ড জর্জ উইয়াহ।
এক্ষেত্রে রদ্রি পেছনে ফেলেছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিনিসিয়ুস জুনিয়রসহ শর্টলিস্টে থাকা ২৯ তারকা ফুটবলারকে। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর জুরি বোর্ডে স্বাভাবিকভাবে এই স্প্যানিশ তারকাই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। এরপর ভোটের নিরিখে যথাক্রমে অবস্থান ভিনিসিয়ুস, জ্যুড বেলিংহ্যাম, দানি কারভাহাল, আর্লিং হালান্ড, কিলিয়ান এমবাপে ও লাউতারো মার্টিনেজের।
প্রেস্টিজিয়াস এই পুরস্কার নিতে এদিন (মঙ্গলবার) ক্রাচে ভর দিয়েই প্যারিসের থিয়েটার দু শাটলেটে প্রবেশ করেন রদ্রি। গত মাসে প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে এসিএল চোট পেয়ে তিনি বর্তমানে মাঠের বাইরে রয়েছেন। এ নিয়ে ৬৪ বছর পর স্পেনের কোনো পুরুষ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন জিতলেন রদ্রি।
সর্বশেষ ১৯৬০ সালে বার্সেলোনার স্প্যানিশ তারকা লুইস সুয়ারেজ আকর্ষণীয় এই পুরস্কার জিতেছিলেন, স্পেনের পুরুষ ফুটবলে সেটাই ছিল এতদিন একমাত্র। এ ছাড়া, ম্যানচেস্টার সিটির তারকা ফুটবলাররা ব্যালনের জন্য মনোনীত হলেও এর আগে কারও ব্যালন পাওয়ার নজির ছিল না। সেদিক থেকেও রদ্রি প্রথম।
রদ্রি গত মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৬৩টি ম্যাচ। যেখানে গোল করেছেন ১২টি ও অ্যাসিস্ট ১৬টি। ওই মৌসুমে তার দখলে গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, উয়েফা সুপার কাপ ও স্পেনের জার্সিতে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। ক্লাব আর জাতীয় দলে সমান পারফরম্যান্সের বিচারেই ব্যালন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন রদ্রি।
এবারের ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করছেন আফ্রিকান কিংবদন্তি ও আইভরিকোস্টের সাবেক তারকা দিদিয়ের দ্রগবা এবং ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপে’র সংবাদকর্মী স্যান্ডি হেরিবার্ট। আর আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল তার ব্যালন জয়ের গুঞ্জন, ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। যদিও এবার রোমাঞ্চ কমিয়ে দিয়েছে রদ্রির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনুপস্থিতি।
ভিনির ব্যালন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার কথা শোনা যাচ্ছিল মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে। তবে দাবার গুটি উল্টে গেছে জানার পরই পুরো রিয়াল মাদ্রিদ দল এই অনুষ্ঠানকে বয়কট ও প্যারিসের ফ্লাইট বাতিল করে। ফলে তালিকায় থাকা ভিনি, দানি কারভাহাল, কিলিয়ান এমবাপে ও কোচ আনচেলত্তির পা পড়েনি জমকালো এই আয়োজনে। অথচ পুরুষ ফুটবলের সেরা ক্লাবের পুরস্কারটি পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্লাঙ্কোসরা গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগসহ শিরোপার ট্রেবল জিতেছে। এ ছাড়া পুরুষ ফুটবলের সেরা কোচের ট্রফি গেছে রিয়াল বস আনচেলত্তির দখলে। সর্বোচ্চ ৫২ গোলের জন্য গার্ড মুলার ট্রফি জিতেছেন গত মৌসুমে পিএসজিতে খেলা এমবাপে। সমান গোলের জন্য যৌথভাবে এই পুরস্কার জেতেন হ্যারি কেইনও।
গত দুই দশক রাজত্বের পর এবার প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অরের তালিকায় ছিলেন না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহাতারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ১৯৫৬ সাল থেকে ফ্রান্স ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে দেওয়া ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই পুরস্কারে তাদের মতো এমন লম্বা সময় ধরে দাপট ছিল না কারও। সেই অধ্যায় পেরিয়ে এবার সম্পূর্ণ নতুন তারকা-যুগের সূচনা ঘটেছে!

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ