২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নতুন করে সাজছে পতেঙ্গা সৈকত

সমুদ্র তীরে চলছে পরিচ্ছন্ন অভিযান, বাগান দখলমুক্ত করে লাগানো হচ্ছে গাছ, চলছে আলোকসজ্জা আর সাজগোজের কাজ; এসব নানা পদক্ষেপে প্রাণ ফিরছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের।
চট্টগ্রামে নগরবাসীর উন্মুক্ত এ বিনোদন কেন্দ্রে ভাসমান দোকান ও ময়লা-আবর্জনায় নাজুক পরিস্থিতি থেকে এবার রেহাই মিলছে। সাগরপাড়ে খোলা জায়গায় প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
পতেঙ্গা সৈকত নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করার এ উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
সৈকতকে পর্যটকবান্ধব করতে বুধবার সকালে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতে নামার মূল সিঁড়ি সংলগ্ন দোকানগুলো সরিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখানে একই রকম কাঠামোতে অস্থায়ীভাবে কিছু দোকানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি বাগানের অংশে নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে। রং করা হচ্ছে বাঁধের ওপর থাকা বোল্ডারে।
সেইসঙ্গে সৈকত সংলগ্ন আউটার রিং রোডের অপর পাশে একটি পর্যটন জোন গড়ে তুলতে জমি অধিগ্রহণের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে সিডিএ।
সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,ভাসমান দোকান বসিয়ে সৈকতের পাশে করা বাগানটি তছনছ করে ফেলা হয়েছিল। সেগুলো সরানো হয়েছে। এখন একপাশে কিছু দোকান থাকবে, তাও অস্থায়ীভাবে। তাদের জন্য নতুন প্রকল্পে স্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
সৈকত পরিচ্ছন্ন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে। যেসব বাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু রাইড বসানো হয়েছিল, সেগুলোও সরানো হবে। পুরো সৈকত খোলা থাকবে। যাতে বেড়াতে আসা মানুষ নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারে।
আউটার রিং রোড থেকে সৈকতে নামার মূল সিঁড়ির পাশের ভাসমান দোকানগুলো সরিয়ে ফেললেও দক্ষিণ পাশে এখনও বেশকিছু দোকান আছে। যেখান থেকে দোকান সরানো হয়েছে, সেই অংশের বাগানে গাছ রোপণ ও নতুন করে রেলিং লাগানোর কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েক বলেন, বাগানের অংশে যেসব দোকান বসানো হয়েছিল সেগুলো কয়েক ধাপে সরানো হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এখন সিডিএ সেটা অব্যাহত রেখেছে। আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্নের বিষয়টি সিটি করপোরেশন করছে।
সৈকতে দোকানের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে বহু বছর আগে থেকেই সেখানে ব্যবসা করেন বলে দাবি করেছেন। আউটার রিং রোড প্রকল্পের সময় জাইকা একটা তালিকা করেছিল। পরে সিডিএ ও জেলা প্রশাসনও তালিকা করে। একেক তালিকায় একেক রকম সংখ্যা আছে দোকানের।
এখন একপাশে ৩৫টির মত একই নকশার দোকান রাখার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দক্ষিণ পাশের দোকানগুলোর বিষয়ে পরে সব সংস্থা মিলে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পতেঙ্গা সৈকতকে নতুন করে সাজানোর কথা তুলে ধরে বছর চারেক আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে পর্যটন জোন করে এর দুই পাশে দেড় কিলোমিটার বেসরকারি অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিল সিডিএ। যেখানে টিকেট কেটে প্রবেশের প্রস্তাব ছিল। সৈকতের বাকি অংশ উন্মুক্ত রাখার কথা ছিল।
ওই ঘোষণার পরপরই ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামসহ’ কয়েকটি সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিরোধিতা করে। পুরো সৈকত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি ওঠে।
বিরোধীতার মুখে ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সিডিএ। তখন সৈকতে থাকা ১৫০টির মত দোকানের তালিকা করেছিল সংস্থাটি। এরপর দোকানের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। এতে সৈকতের ৩০ ফুট ওয়াকওয়ের বেশিরভাগ দোকানের দখলে চলে গিয়েছিল।
সিডিএ পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নতুন বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করে। ২০২০ সালে আউটার রিং রোডটি গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলছেন, সৈকত সংলগ্ন আউটার রিং রোডের বিপরীত পাশে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমতি চেয়ে তারা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি।
অনুমোদন পেলে সেখানে ট্যুরিস্ট স্পট ও পার্কিং করা এবং দোকানগুলো সব সেখানে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আপাতত পতেঙ্গা সৈকতের যে এক কিলোমিটার অংশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আছে, সেই অংশের সৌন্দর্য বর্ধন ও সংস্কারের কাজটি কয়েক মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ