৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুললেন শাহরুখ খান

ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খুললেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সোমবার নিজের ৫০তম জন্মদিনে শাহরুখ বলেন, ‘দেশে চরম অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আমরা শিগগিরই অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘অসহিষ্ণু হওয়াটা অত্যন্ত নির্বোধের কাজ। আমাদের মতো দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে না পারার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর নেই।’

প্রতিবাদী লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদ-শিল্পকর্তাদের তালিকায় এ ভাবেই ঢুকে গেলেন এ সুপারস্টারও। রবিবার মুখ খুলেছিলেন প্রবীণ সরোদশিল্পী আমজাদ আলি খান। সরকারি পুরস্কার যারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাদের ভাবাবেগকে সমর্থন করেছিলেন। সোমবার সেই কাজটাই করলেন শাহরুখ।

পুরস্কার ফেরানো নিয়ে বলিউডে এখন জোর বিতর্ক চলছে। এক দিকে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়-আনন্দ পট্টবর্ধনেরা তাদের পুরস্কার ফেরাচ্ছেন। শাবানা আজমি, শর্মিলা ঠাকুর তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আবার অন্য দিকে অনুপম খের, মধুর ভান্ডারকররা সমালোচনায় মুখর। শাহরুখ কিন্তু বলেন, ‘পুরস্কার ফিরিয়ে দেয়া অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত। সৎ ও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত।’ তিনি কি তবে পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেবেন? শাহরুখের কথায়, ‘পুরস্কার ফেরানোটা খুবই প্রতীকী ব্যাপার বলে মনে হয় আমার। তাতে খুব কিছু বদলায় না। তবে সে রকম মুহূর্ত যদি আসে, তা হলে ফেরাব।’ আর অনুপমদের বিরোধিতা নিয়ে শাহরুখ বলেন, ‘যার যার বক্তব্য রাখার স্বাধীনতার নামই সহিষ্ণুতা। অনুপম তার কথা বলবেন। আবার যারা পুরস্কার ফেরাতে চান, তারা ফেরাবেন। সেটাই তো গণতন্ত্র।’ ঠিক যেমন কে কী খাবেন, তাই নিয়ে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না বলেই তার মত।

তা হলে এই প্রতিবাদের আবহে কিং খান নিজে ঠিক কোন দিকে? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরুখ খোলাখুলি বলেন, ‘‘আমি জীবনে তেমন ভাবে বড় মাপের অর্থবহ কোনও বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারিনি। কিন্তু যারা সাহসী অবস্থান নিতে পারেন, নিচ্ছেন, আমি তাদের পাশে আছি।’ পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিতর্কেও তার সমর্থন ছাত্রদের দিকে। তার কথায়, ‘যা হচ্ছে, খুব অন্যায় হচ্ছে। গোটা ব্যাপারটাই খুব অস্বস্তিকর।’ কিন্তু হলিউড তারকারা যে ভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয়ে মতামত দেন, এখানে তা হয় না কেন? সুপারস্টারের স্বীকারোক্তি, ‘নিজের কাজটা করে যাওয়ার তাগিদে অনেক সময়ই চুপ করে থাকতে হয়। এই বাধ্যবাধকতাটা আমার কাছে খুব পীড়াদায়ক। তা না হলে আমি জানি, আমার বাড়িতে কেউ এসে পাথর ছুড়বে! কেউ আমার ছবি আটকে দেবে! আমেরিকায় এ রকম হয় না তো!’

এর আগে মুম্বাইয়ে শাহরুখের ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মুক্তি আটকে দিতে চেয়েছিল শিবসেনা। গুজরাতে দেখানো হয়নি ছবিটি। শাহরুখের একটি লেখার সূত্রে তাকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার ফতোয়াও দেয়া হয়। বারবার তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গটি উঠতেই শাহরুখ বলেন, ‘আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। তবে ২৫ বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পরেও যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন ব্যথা পাই।’

কিন্তু এই দেশে ভারতের মতো দেশে শীর্ষ তিন তারকাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, এটা কি ধর্মনিরপেক্ষতার চিহ্ন নয়? শাহরুখের উত্তর, ‘যে দিন এই ভাবে কিছু নাম, কিছু পদবীকে সামনে এনে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়ার দরকার হবে না, আমরা আসলে সেই দিন ধর্মনিরপেক্ষ হব।’ দেশের একটা অংশে বিশেষ করে মুম্বাইয়ে পাক শিল্পীদের অনুষ্ঠান নিয়ে এর আগে অনেক ঝামেলা হয়েছে। সম্প্রতি নিজের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে পাক সঙ্গীতশিল্পী গুলাম আলিকে। শাহরুখ কিন্তু জানিয়েছেন, তার পরবর্তী ছবিতে কাজ করছেন এক পাক অভিনেত্রী। শিবসেনা যদি ফের কোনও গোলমাল করে? শাহরুখ জানান, এই সব নিয়ে ভেবে তিনি তার কাজের ক্ষতি করতে পারবেন না। নিজের কাজটা তাকে করতেই হবে। প্রতি বারের মতো এ বারেও তার বাংলোর সামনে যথারীতি জড়ো হয়েছিলেন ভক্তরা। শাহরুখ বেরিয়ে এসে তাদের দিকে হাত নাড়েন। শেষ পর্যন্ত মানুষের ভালবাসাই যে তাকে আপ্লুত করে রাখে, স্বীকার করেন সে কথাও।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ