রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপটে এখনো দেশে অশনি সংকেত পুরোপুরি কাটেনি। জাতীয় নির্বাচনকে ইস্যু করে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল, হরতাল, অবরোধসহ নানা কর্মসূচি হঠাৎ করে চলে আসতে পারে। আর এরই মধ্য দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতামূলক ঘটনা ঘটতে পারে। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে খোদ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিবেদনে। যে প্রতিবেদনটি সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০১৪-১৫ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা শেষে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকার অত্যন্ত সজাগ। এর পরও যে সুপারিশ করা হয়েছে তা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত করতে হবে। এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ রোধ করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সুসমন্বয় ও আরো জোরদার করার কথা সুপারিশ করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি জেলার নিরাপত্তা সম্পর্কে সার্বিক সচেতনতা বাড়ানো, জানমালের নিরাপত্তার জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যে কোনো প্রকার জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা যেন সংগঠিত হতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বিঘ্নকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলায় বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের প্রতি সজাগ সৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদনে ১৭টি সুপারিশের মধ্যে অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- মন্ত্রিসভাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আরো জোরদার করা। সরকারের উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়ানো ও শ্রম বাজার সম্প্রসারণের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাজ করতে গিয়ে যেসব বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তার মধ্যে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, পানি সম্পদ, সমাজকল্যাণ ও সড়ক পরিবহন-মহাসড়ক বিভাগের বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। যেখানে বিভিন্ন ধরনের অশনি সংকেত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা। অন্যান্য মন্ত্রণালয় তাদের কাজে সঙ্গে বহির্বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা পরামর্শ ছাড়াই বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এর ফলে একদিকে সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা পরিহারের জন্য নিবিড় সমন্বয়ের ব্যাপারে রুলস অব বিজনেস ও অ্যালোকেশন অব বিজনেস পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ক্ষেত্রে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল উপযোগী রাখা। গত ৩০ বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতি বৃষ্টি ও আর অতি বৃষ্টির সৃষ্ট বন্যা সারাদেশে জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এসব মহাসড়কের নেটওয়ার্ক কার্যকর করার জন্য দ্রুত সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন। আর এর জন্য অনুন্নয়ন খাতে ২০০ কোটি অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
জানা গেছে, ‘রূপকল্প-২০২১’ অনুসারে দেশের দারিদ্র্য হার ২০২১ নাগাদ ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের আলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন কর্মসূচি সুসমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করার সুপারিশ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সব ধরনের দ্বৈততা পরিহার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।