আলিম দাররা কেন বাংলাদেশকে পেলেই এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেন? তাহলে বাংলাদেশকে ‘হার’ উপহার দেওয়ার মধ্যেই তাদের সত্যিকারের আনন্দ লুকায়িত? ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি বাংলাদেশীদের হৃদয়ে এক ক্রিকেটীয় ‘ক্ষত’ হয়ে আছে। প্রতিপক্ষ ভারত নয়, ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছিল আসলে ম্যাচের দুই আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিম দার এবং ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ডের কাছে! একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছিলেন দুজন! সেই আলিম দার বাংলাদেশের সামনে ভিলেন হয়ে দেখা দিলেন আবারও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে তেমন বিতর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বটে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই তৃতীয় তথা টিভি আম্পায়ার হিসেবে নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার। প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট ৫০ আগ বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছেন দুর্দান্ত খেলতে থাকা সাব্বির রহমানকে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ১১৭ রানেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। এই অবস্থায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাব্বির। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে ১০৫ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন দুজনে। যে জুটিতে সাব্বিরের অবদানেই বেশী। পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেওয়া সাব্বির ততক্ষণে করে ফেলেছেন ১১৩ বলে ৬৬ রান। দলের বিপদ কাটিয়ে ষষ্ঠ উইকেট ওই জুটিতে যখন আরও বড় কিছুরই ইঙ্গিত, তখনই বাধ সাধেন আলিম দার।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেওয়া নাথান লায়নের বলটি ছিল লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। ঝুঁকি মুক্ত ভেবে সাব্বির খেলতে চেয়েছিলেন পুল শট। কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত সেই শটই বিপদের কারণ হয়ে যায় আলিম দারের সুবাদে! সাব্বির ব্যাটে বলে করতে পারেননি। বল ব্যাটে না লাগায় শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ঘুরে যান সাব্বির। তার পেছনের পা চলে আসে ক্রিজের বাইরে। তবে সামনের পা লাইনের উপরই ছিল। বলটা ধরে তড়িত স্টাম্প ভেঙে দিয়ে আবেদন করেন অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড।
মাঠের আম্পায়ার সিদ্ধান্তের ভার দেন টিভি আম্পায়ারের আলিম ধারের উপর। রিপ্লেতে পরিস্কার, সাব্বিরের সামনের পা লাইনের উপরই ছিল। এরকম ক্ষেত্রে ‘বেনিফিট অব আউট’ হিসেবে সিদ্ধান্ত মূলত ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য সাব্বিরের, দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। ‘ভিলেন’ সেজে আলিম ধার লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে ঘোষণা করলেন সাব্বিরের ‘মৃত্যুদণ্ড’। ৬৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেও সাব্বির মাঠ ছাড়লেন হতাশায় মাথা নিচু করে। সাব্বিরে বিদায়ে মৃত্যু ঘটে অসাধারণ এক জুটির। আলিম দারের লাল বাতির ইশারায় মৃত্যু ঘটে সাব্বিরের প্রথম সেঞ্চুরির সম্ভাবনার!
সৌভাগ্যবান লায়ন মেতে উঠলেন টেস্টে টানা তৃতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতে। স্বস্তির এক ব্রেক থ্রু পেয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা মেতে উঠে উৎসবে। শুধু বাংলাদেশী দর্শকরাই নন, আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হতবাক ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ধারা বিরণী প্যানেলও।
সাব্বিরের বিদায়ের পর অবশ্য আর কোনো বিপদ ঘটেনি। নাসির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকি সময়টুকু নিরাপদেই কাটিয়ে দিয়েছেন মুশফিক। যিনি দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৬২ রানে। নাসির ব্যাট করছেন ১৯ রানে। দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৫৩।
স্কোরকার্ডের দিকে তাকিয়ে সাব্বিরের আউটটির জন্য আফসোস হচ্ছে আরও বেশী। আলিম দার আউটটা না দিলেই তো ৫ উইকেটের জায়গায় উইকেট থাকত ৫টি! বাকি ৫ উইকেট হাতে থাকায় আগামীকাল দ্বিতীয় দিনে আরও ভালো কিছুরই স্বপ্ন দেখতে পারত বাংলাদেশ।