প্রতিদিনই খাবারে রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হলেও ফরমালিন নিয়ে ডামাডোলের কারণে অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়টি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ফসলে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার নিয়েও তেমন শোরগোল হচ্ছে না। এতে ক্ষতি কিন্তু থেমে থাকছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, খাবারে রাসায়নিক, ফুড কালারের নামে কাপড়ের রং ব্যবহার এবং ফসলে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ফল এবং সবজিতে রাসায়নিক ও কীটনাশক মেশানো হচ্ছে জেনেও সবাই সেটাই কিনছে। প্রায় প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরাও পড়ছে। তারপরও থেমে নেই খাবারে এসব ক্ষতিকর পদার্থ মেশানো।
খাবারে বিষাক্ত দ্রব্য মিশিয়ে দেশে ‘নীরব গণহত্যা’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রাসায়নিকের ব্যবহারের ফলে ঠিক কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন গবেষণা না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, ক্রনিক লিভার ও কিডনি রোগীদেরকে পরীক্ষা করে তারা সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সুদীপ রঞ্জন দেব বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, এ রোগগুলো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা হলে হয়তো রাসায়নিকের কারণে লিভার, কিডনির বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে পাওয়া যাবে।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন- পবার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩’ সহ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করলেও সেগুলোর বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারি সংস্থাগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুস সোবহান বলেন, ‘উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বিষ মেশানো হচ্ছে। কৃষক ফসলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য হরমোন ব্যবহার করছেন, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’ কীটনাশক ও রাসায়নিকের অতি ব্যবহার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এসব বন্ধে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
দেশে রাসায়নিক ও কীটনাশক আমদানির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি চামড়া ও পোশাক কারখানাগুলোকে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তারা।