৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ত্বক ঝুলে পড়া রোধ করতে

ত্বকের টানটানভাব বয়সের দোষে নাও হারাতে পারে।
সঠিক যত্নের অভাবেও অনেকসময় চামড়া ঝুলে যেতে থাকে। এর থেকে নিস্তার পেতে কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।
এই বিষয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও ‘বেটারগুডস ডটঅর্গ’য়ের ত্বক-বিষয়ক পরামর্শক ডা. আল্পনা মোহতা বলেন, “বংশগতি, হরমোনের পরিবর্তন ছাড়াও বিভিন্ন কারণে চামড়া ঝুলে যেতে পারে।”
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই চিকিৎসক ‘আরও বলেন, “কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ত্বকের উপরিভাগ ঝুলে যাওয়ার গতি ধীর করার পাশাপাশি রোধও করা যায়।”
কোলাজেন ও এলাস্টেন বাড়ানো প্রসাধনী ব্যবহার
ত্বক কোমল ও আর্দ্র রাখতে নানান রকম প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়।
ডা. মোহতা এসব প্রসাধনীর সঙ্গে কোলাজেন ও এলাস্টেন বৃদ্ধিকারক উপাদান সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারে পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “কোলাজেন ও এলাস্টেন- এই প্রোটিনগুলো ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে।”
পাশাপাশি ভিটামিন ই, সি, রেটিনল, আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড উপাদান সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার এলাস্টেন ও কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। ফলে ত্বকের উন্নতি সাধন হয়।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা
সুস্থ থাকার পাশাপাশি সঠিক ওজন ধরে রাখতে ব্যায়ামের কথা বলা হয়। তবে শরীরচর্চার কারণে ত্বকেরও উন্নতি ঘটে।
ডা. মোহতা বলেন, “ব্যায়ামের ফলে চামড়ার নিচে পেশি সুগঠিত হয়। এর প্রভাবে ত্বকও টানটান থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্যানুরারে- ব্যায়ামের সুফল পেতে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট কঠিন ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়।
স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার খাওয়া
ডা. মোহতা বলেন, “সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সুস্থ ত্বকের জন্য ফল, সবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।”
আর খেতে হবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। যেমন- জামজাতীয় ফল, বাদাম, বীজ, গাঢ় সবুজ পত্রল সবজি এবং ডার্ক চকলেট।
“ফ্রি র্যাডিক্যাল্স’য়ের কারণে ত্বকে বাজে প্রভাব পড়ে। ‘ফ্রি র্যাডিকেল্স’ প্রতিরোধ করতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে চামড়া ঝুলে পড়ার গতি ধীর হয়। পাশাপাশি ত্বক টানটান রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে”, বলেন ডা. মোহতা।
পর্যাপ্ত ঘুম
সবসময় ভালো ঘুম নিশ্চিত করা না গেলেও জানা কথা যে, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস।
ডা. মোহতার ভাষায়, “এসব রোগ ছাড়াও ভালো ঘুম না হওয়ার কারণে ত্বকের ওপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। কারণ ঘুমের মধ্যে ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।”
এজন্য চাই ‘গুড নাইট স্লিপ’। রাতে অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টা গাঢ় ঘুম নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. মোহতা।
ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো
ধূমপান ও মদ্যপান যে শরীরের জন্য খারাপ সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এক্ষেত্রে ত্বকেরও ক্ষতি হয়।
ডা. মোহতার ভাষায়, “ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কোলাজেন ও এলাস্টেন ভেঙে যায়। ফলে ত্বকে অকালে বয়সের ছাপ পড়ে। সুস্থ থাকতে এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।”
প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার
ডা. মোহতা ব্যাখ্যা করেন, “সূর্যালোকের প্রভাবে কোলাজেন ও এলাস্টেন ভেঙে গিয়ে ত্বকের ক্ষতি হয়। উচ্চ মাত্রার এসপিএফ ব্যবহারের করলে এই ক্ষতি এড়ানো যায়। ফলে ত্বক ঝুলে পড়া থেকে রক্ষা পায়।”
সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা করতে সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশন’ পানিরোধী, ৩০ এবং এর বেশি মাত্রায় এসপিএফ ক্রি ম ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।”
আর্দ্রতা রক্ষা
আর্দ্র থাকার নানান স্বাস্থ্যকর সুবিধা রয়েছে।
বস্টনের ‘হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে, পর্যাপ্ত পানি পানের ফলে সংক্রমন থেকে দূরে থাকা যায়, মেজাজ ভালো থাকে, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য হারায় না আর ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
এক্ষেত্রে ডা. মোহতা বলেন, “পর্যাপ্ত পানি পানের ফলে ত্বক আর্দ্র ও পুষ্ট থাকে। ফলে চামড়া ঝুলে পড়া থেকে রক্ষা পায়। দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করা উচিৎ।”
তবে গরম আবহাওয়া ও কাজের মাত্রার ওপর নির্ভর করে এই পরিমাণের বেশি পানি পান করার দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন, ডা. মোহতা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ