সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে অভাবনীয় উপস্থিতি ছিল। কিন্তু পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত উপস্থিতি ছিল না। এ কারণে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের বাধার মুখে সড়কে দাঁড়াতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে হতাশ দলটির হাইকমান্ড। অনেকে মনে করছেন, কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার কারণেই এমনটা হয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, মহাসমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতির পর সবার প্রত্যাশা ছিল রাজধানীর প্রবেশপথগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। ব্যাপক উপস্থিতি হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হতো। একপর্যায়ে প্রবেশপথগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যেত। তাহলে পুরো পরিস্থিতিই পালটে যেত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এখন উলটো বিএনপিকে চাপে রাখতে সরকার পুরনো কৌশল হিসাবে মামলা-গ্রেফতারের পথ বেছে নিতে পারে। তবে দীর্ঘদিন পর পুলিশ ও ক্ষমাতসীনদের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এটা সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা দেবে।
এমন পরিস্থিতিতে একদফার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড। আপাতত টানা কর্মসূচির বদলে থেমে থেমে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠতে চায় দলটি। এদিকে শনিবারের কর্মসূচির পর সরকারের পদত্যাগে নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ মহানগর ও জেলায় জেলায় জনসমাবেশ হবে। ঢাকার কর্মসূচি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ৩টায়। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি যুগান্তরকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশের ব্যাপারে ডিএমপিকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি তারা অনুমতি দেবে।’
সরকারের পদত্যাগের একদফা বাস্তবায়নে কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবছে দলটির হাইকমান্ড। আপাতত টানা কর্মসূচি থেকে সরে এসে কেন্দ্র ও তৃণমূলে তা পালন করা হতে পারে। সরকারের পদত্যাগে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় টানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা ছিল। এখন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ফের চূড়ান্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করবে দলটি।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এক ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে। কারণ ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থানের মতো বড় কর্মসূচি দেওয়া হলেও স্থায়ী কমিটির অনেকেই এ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। আবার মাঠ পর্যায়ে যারা বাস্তবায়ন করবে তারাও সময়মতো জানতে পারেননি। ফলে তারা প্রস্তুতি নিতে পারেননি। এছাড়া সবার সঙ্গে আলোচনা ও প্রস্তুতি ছাড়া এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়াকে ভালোভাবে নেননি অনেকে। সমন্বয়হীনতা ছিল বলেই অবস্থান কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। আবার আগের দিন মহাসমাবেশের পর প্রায় সবাই ছিল ক্লান্ত। ঢাকার দক্ষিণে কর্মসূচি পালিত হলেও উত্তরে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের যে স্পটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই সেখানে উপস্থিত হননি।
নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, দলের হাইকমান্ড গুটিকয়েক নেতার সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি যারা মাঠে বাস্তবায়ন করবে তাদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। শেষ সময়ে তারা কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে পারে। ঢাকা মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সমাবেশ শুরু হওয়ার পরও কেউ পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। মহাসচিব রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরে। কিন্তু এত বড় কর্মসূচির আগে সিনিয়র ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্যও কর্মসূচি সম্পর্কে জানত না। রাতের বেলা স্পট নির্ধারণ ও নেতারা কে কোথায় থাকবে তা চূড়ান্ত হয়। গভীর রাতে ফোন করে তাদের এ তথ্য জানানো হয়। অনেককে জানাতেও পারেনি। ফলে অনেকে স্পটে যাননি। মহানগর ও জেলার শীর্ষ নেতারা ঢাকায় থাকলেও তাদের বেশিরভাগই স্পটে ছিলেন না। যারা ঘরে বসে কর্মসূচি প্রণয়ন করেন তাদের বাস্তব অবস্থা বিবেচনাসহ সবার সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন ছিল।