ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এরইমধ্যে দরিদ্র মানুষের মাঝে চাল বিতরণ শুরু করেছে। তবে প্রত্যেক কার্ডধারী ব্যক্তিকে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার নির্দেশ থাকলেও ২-৩ কেজি চাল কম এবং দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড না দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড দেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (২৪ জুন) চাল বিতরণের সময় এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর, আকচা, শুখানপুকুরী, দেবীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠে।
বুধবার (২১ জুন) থেকে শনিবার (২৪ জুন) পর্যন্ত সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে হত-দরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে এ অভিযোগ পাওয়া যায়। আকচা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোতালেবসহ তিনজন মিলে ভিজিএফের ৩০ কেজি ওজনের একটি খোলা চালের বস্তা নেন। দোকানে ওজন দিয়ে দেখেন চাল ৩০ কেজি নয়, ২৫ থেকে ২৭ কেজি। বাকি চাল উধাও। ওজনে কম দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, ওই ইউনিয়নে অসচ্ছলদের চালের কার্ড না দিয়ে সচ্ছলদের কার্ড দিয়ে ভিজিএফর চাল প্রদান করা হয়। সচ্ছল ব্যক্তিরা সেই চাল বিক্রি করে দেয়। তবে অভিযোগে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ কথা বলতে রাজি হননি।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যারা প্রকৃত গরিব তারা যদি চাল না পায় তাহলে চাল কারা পাচ্ছে? যারা চাল পাচ্ছে তারা অনেকেই তা বিক্রি করে দেয়। বস্তাপ্রতি আধা কেজি চাল কম মানা যায়। কিন্তু ৪ থেকে ৫ কেজি কম কেনো। বাকি চালগুলো কোথায় যাচ্ছে? কে খাচ্ছে? চেয়ারম্যানের কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি তার নিজের টাকায় কিনে চালগুলো দিচ্ছেন।
তারা আরও জানান, এতো অভিযোগ তবুও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ইউএনওকে অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
একই চিত্র সালন্দর ইউনিয়নেও। সেখানে চাল বিতরণের সময় প্রত্যেক কার্ডধারীকে ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ বালতিতে করে চাল দেয়ায় অনেকে সেই চাল পাল্লা দিয়ে ওজন দিয়ে দেখেন প্রতি বালতিতে ২-৩ কেজি কম।
অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। আর সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী ওজনে কম দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
অন্যদিকে শুক্রবার (২৩ জুন) সদরের শুখানপুখুরি ইউনিয়নে দেখা গেছে, ১৩ বস্তা চাল বের করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়রা তা আটক করে। তবে আটক চালগুলো চেয়ারম্যানের লোকজনের, এমন দাবি চাল নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির। পরে সেসব চালের বস্তা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান উপস্থিত না থাকায় দায়িত্বে থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান আমজাদ আলী জানান, চাল ফেরত আনা হয়েছে তা আবারও বিতরণ করা হবে।
এমন অনিয়ম হলেও সেখানে পাওয়া যায়নি প্রশাসনের কাউকে।
তবে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।