৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জ্বালানি গ্যাসে সঙ্কটে নতুন মাত্রা, পাইপলাইনে ভারত-ইরান-বাংলাদেশ

gaaaaasগ্যাস আমাদানিতে ইরানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সরকার। এ জন্য আগামী মার্চে জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল ইরান সফর করবে।

প্রস্তাবিত ভারত-ইরান পাইপলাইনে সংযুক্ত হতে পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের এই প্রতিনিধি দল গ্যাস আমদানি ও পাইপলাইনে যুক্ত হওয়ার নানা শর্ত, আর্থিক ও কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন।

গত মঙ্গলবার বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ইরান-ভারত পাইপলাইনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জ্বালানি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বৈঠকে মতামত দেন। পাকিস্তানকে এড়িয়ে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ভারত-ইরান পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়টি গত ডিসেম্বরে চূড়ান্ত হওয়ার পরই বাংলাদেশ এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলো।বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইরান-ভারত গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত হতে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইরানও এ পাইপ লাইনে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাইপলাইনে যুক্ত হতে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণের পাশাপাশি পূরণীয় শর্তগুলো পর্যালোচনার জন্য জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের  নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী মার্চে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ইরানে গিয়ে প্রস্তাবনা ও শর্তগুলো চূড়ান্ত করা কিংবা এগিয়ে নেয়ার কাজ সম্পন্ন করবে।এ প্রসঙ্গে বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জ্বালানির বিপুল চাহিদা রয়েছে। ইরান থেকে গ্যাস ও এলপিজি আমদানির বিষয়টি আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। এরই অংশ হিসেবে ভারত-ইরান পাইপলাইনে যুক্ত হতে চাইছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে ইরানও আগ্রহ দেখিয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাইপলাইনে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ও ইরানের পক্ষ থেকে প্রায় চূড়ান্ত। এখন ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে দর কষাকষি ও আলোচনা বাকি। ইরানের আগ্রহের কারণে ভারতও এ ব্যাপারে রাজি হবে বলে প্রাথমিক আলোচনায় জানা গেছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে ত্রিপক্ষীয় সভা আয়োজনের চেষ্টা চলছে। সেখানেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।ঐ কর্মকর্তা জানান, ভারত ও ইরানের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা ও চুক্তির জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস প্রাপ্তির লাভ-ক্ষতির হিসাব, গ্যাসের দাম ও সঞ্চালন খরচ এবং বাণিজ্যিক চুক্তির শর্তগুলো নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইরানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ রেজা মওদুদির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাণিজমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তখন ইরানের প্রস্তাবে বাংলাদেশ এলপিজি আমদানি করতে রাজি হয়। একইসঙ্গে ইরান-ভারত গ্যাস পাইপলাইনে বাংলাদেশকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিলে ইরানের প্রতিনিধি দলটি তাতে রাজি হয়।সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক দ্যা হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানায়, আরব সাগরের তলদেশ দিয়ে ইরান থেকে ভারতে গ্যাস সঞ্চালনের প্রস্তাবিত পাইপলাইন নির্মাণে দুই দেশ রাজি হয়েছে। এতে খরচ হবে সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে ৩১ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সরবরাহ করা হবে। গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের দুই বছরের মধ্যে পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সাউথ এশিয়া গ্যাস এন্টারপ্রাইজ (এসএজিই) পাকিস্তানের এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল এড়িয়ে এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনটি নির্মাণ করবে। ইরান থেকে গ্যাস কেনার ব্যাপারে আগ্রহী যে কেউ পাইপলাইনটি নির্ধারিত সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারবে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ভারত-ইরান পাইপলাইন নির্মাণের এ শর্তের কারণে বাংলাদেশ সহজেই গ্যাস আমদানি করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেশে বতর্মানে দৈনিক ৩২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উত্পাদনক্ষমতা ২৭৫ কোটি এবং প্রকৃত উত্পাদন ২৭০ থেকে ২৭২ কোটি ঘনফুট। প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে। আর এ সংকট প্রতি বছরই বাড়ছে।

চলমান গ্যাস সংকট ও ভবিষ্যতের জ্বালানি চাহিদা মাথায় রেখে সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ