প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। জ্ঞানই সব থেকে বড় সম্পদ। এই সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন, সবচেয়ে মেধাবী হলো এ দেশের ছেলেমেয়েরা। কিন্তু তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাজ সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। আমরা তা করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, এই শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণের জন্য জাতির পিতা স্বাধীনতার পরপর ড. কুদরত-এ-খোদাকে দিয়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। তিনি ৭৪ সালে সেই রিপোর্টও দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি।’
‘এরপর ৯৬ সালে এসে আমরা আবার একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করি এবং আমরা একটি শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করি। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতা থেকে চলে যাই।’শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকারে এসেই আমরা সেই শিক্ষা নীতিমালা শুধু গ্রহণই করিনি, আমরা বাস্তবায়নও করে যাচ্ছি।’
‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া, এটাই আমাদের লক্ষ্য। যেমন : আমাদের পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চল আছে, চরাঞ্চল আছে, বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে যেখানে হয়তো যাতায়াত এত সহজ না। সেই ধরনেরও জায়গা আছে। প্রত্যেক জায়গায় যাতে শিক্ষার আলো জ্বালা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় আমরা মডেল স্কুল যেমন করে দিচ্ছি। কিন্তু প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা সরকারি স্কুল, সরকারি কলেজ আমরা করব। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।’
‘যেসব এলাকায় কোনো সরকারি-স্কুল কলেজ নাই, আমরা তার একটা তালিকা ইতিমধ্যে করে ফেলেছি এবং সে অনুযায়ী আগে হচ্ছে, যেখানে যেখানে নাই, সেখানে করে ফেলা। তারপর উপজেলা বা ইউনিয়ন এগুলোর জনসংখ্যা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, সেটার হিসাব করে পরবর্তীতে আরো পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছা আমাদের আছে।’
স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ‘সুপ্ত প্রতিভা’ খুঁজতে জাতীয়ভাবে আয়োজিত সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সত্যিই উজ্জ্বল।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা (অভিভাবক ও শিক্ষক) একেকটা সোনার টুকরো ছেলেমেয়ে তৈরি করছেন। স্বাধীন দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সোনার ছেলেমেয়ে চেয়েছিলেন। আজকের এই ছেলেমেয়েরা সোনার ছেলেমেয়ে হিসেবে দেশটাকে গড়ে তুলবে। এই প্রজন্মই ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে যেন বাঁধা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকের ছেলেমেয়েদের সৌভাগ্য, তারা এক জায়গায় বসে বিশ্বটাকে দেখতে পারে। প্রযুক্তির দ্বারা শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও বিশ্বকে জানার সুযোগ আরও প্রসারিত করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।