১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জেনে নিন, আপনিও মাস্টারমাইন্ড কি না!

মাস্টারমাইন্ড। এই একটি শব্দে মাতোয়ারা এখন পুরো বাংলাদেশ। কখনো গ্রামে গঞ্জে, আবার কখনো বিশ্বমঞ্চে দেখা মিলছে মাস্টারমাইন্ডের। কেউ কেউ আবার গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো নিজেকে মাস্টারমাইন্ড দাবিও করে বসছেন হরহামেশা। এটাই ট্রেন্ড, কী আর করা!
শব্দগতভাবে মাস্টারমাইন্ড বলতে বোঝানো হয় এমন একজন ব্যক্তিকে, যার অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা রয়েছে। কেমব্রিজ ডিকশনারি বলছে, মাস্টারমাইন্ড হলো তেমনই একজন ব্যক্তি, যে কিনা দুঃসাধ্য কার্যাবলীর (প্রায় সময়ই অপরাধমূলক) বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে পারে এবং এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন যেন সফল হয়, সেটি নিশ্চিত করে।
নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, মাস্টারমাইন্ড আসলে কত বড় একটি বিষয়। এক্ষেত্রে কেমব্রিজ ডিকশনারির বলা ‘অপরাধমূলক’ শব্দটি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন প্লিজ। আপনার সাদা মনে কালো রাখবেন না! আর জানেনই তো, নিজের সুবিধায় প্রয়োজনে অনেক কিছুই ভুলে যেতে এ দেশের মানুষের বাধে না খুব একটা। কথায় তো আছেই, ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’। এই চাচাকে কত কিছুই যে করা লাগে!
এত আলাপ বাদ দেওয়া যাক। আসল হিসাবে ঢোকা হোক বরং। মাস্টারমাইন্ডের কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সেগুলো জানতে পারলে, যে কেউ নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারে। কে জানে, হয়তো মেলানোর পর, দুরু দুরু বক্ষে, আপনার হৃদয়ের গহীন থেকে শুনতে পাবেন উচ্চস্বরে–‘তবে কি আমিই মাস্টারমাইন্ড!’
সুতরাং আগে লক্ষণগুলো জানা দরকার। মাস্টারমাইন্ড নিয়ে প্রায় ১০ বছর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি লেখা প্রকাশ করেছিল। এখনও অনলাইনে পাওয়া যায়। পড়ে জানা গেল, মাস্টারমাইন্ড ব্যক্তিরা একটি বিশেষ ঘরানার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। তাদের পরিকল্পনা করার সক্ষমতা বেশি থাকে। থাকে নতুন নতুন ধারণা সৃষ্টির ক্ষমতা। এরা প্রায়ই নেতা হয়ে যান। আবার কিছুটা চাপা স্বভাবেরও হন।
সব মিলিয়ে মাস্টারমাইন্ডদের দূরদর্শী হতেই হয়। তারা আগেভাগেই অনেক কিছু বুঝে ফেলতে পারেন। ভবিষ্যতে কী হবে, না হবে–তা আঁচ করতে পারেন তারা। সেই অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জনেও এরা সচেষ্ট থাকেন।
আবার মাস্টারমাইন্ডরা স্বাধীনচেতা হন, নিজে নিজেই সব করে ফেলতে চান প্রায়ই। অদক্ষ লোকজন আশপাশে দেখলে এরা বিরক্তও হন বেশ।
মাস্টারমাইন্ডরা যুক্তির ভিত্তিতে কাজ করতে পছন্দ করেন। কাজ করার ক্ষেত্রে এক ধাপ টপকে অন্য ধাপে শর্টকাটে চলে যাওয়ার ইচ্ছা এদের থাকে না। বরং এরা বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসেন। তত্ত্ব ও ধারণার বদলে কমনসেন্স দিয়ে জীবন চালানোই এদের পছন্দ।
একবার কোনো কাজ শুরু করলে মাস্টারমাইন্ডরা নাকি সাধারণত সেই কাজ মাঝপথে ছেড়ে যান না। যেখানে নিজেদের মেধার দাম তাঁরা পান না বা প্রশংসা পান না, সেখানে খুব বেশিক্ষণ থাকেন না মাস্টারমাইন্ডরা। তাঁরা ওই অসুখকর স্থান বা গোষ্ঠী থেকে বের হয়ে যান এবং বের হয়েই তাঁদের পরিকল্পনা না বোঝা ‘নাদান’দের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।
মাস্টারমাইন্ডদের বিষয়ে আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁদের কখনো কখনো অতিরিক্ত খাওয়া, বেশি বেশি শপিং করা বা
টেলিভিশন দেখার মতো অভ্যাস থাকতে পারে! আর মাস্টারমাইন্ডদের কারও কারও কিন্তু রসবোধ দারুণ হয়।
তো, জেনে গেলেন মাস্টারমাইন্ডদের কিছু বৈশিষ্ট্য। এবার নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পালা। কী, কাজটা কঠিন মনে হচ্ছে? আসুন, সহজ করে দেওয়া যাক।
ধরুন, বাসায় বা মেসে আপনার একদিন বাজার করার কথা। সপ্তাহের সেই দিনটি হয়তো নির্দিষ্ট করাই আছে। ঠিক সেই দিনটিকে লক্ষ্যে পরিণত করে বাজারে যাওয়ার ঠিক ঘণ্টাখানেক আগে আপনি একটি কল্পিত অসুখে মাথা পেট চেপে শুয়ে পড়লেন। ফলে অন্য কেউ যেতে বাধ্য হলো, আপনার কাজ কমে গেল। এটিও কিন্তু দূরদর্শিতা। এমন দূরদর্শিতা যদি আপনার থেকে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনিও কিন্তু মাস্টারমাইন্ড উপাধি পাওয়ার যোগ্য।
এমন অনেক সময়ই হয় যে, আপনি হয়তো ঘুমাতে খুব ভালোবাসেন। একটু বেলা করেই আলসেমি গায়ে জড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠেন। একটু ভোরে কেউ ঘুম ভাঙিয়ে দিলেই আপনার মেজাজ কি খারাপ হয়ে যায়? তাহলে বুঝে নেবেন, আপনি কিন্তু মাস্টারমাইন্ড হওয়ার পথেই আছেন! কারণ ওপরেই তো পড়লেন যে, কোনো কাজ শুরু করলে মাস্টারমাইন্ডরা নাকি সাধারণত সেই কাজ মাঝপথে ছেড়ে যান না। মনে রাখবেন, ঘুমকাতুরেদের কাছে ঘুমও কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ! সুতরাং সেটি না ভাঙাতে চাইলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন মাস্টারমাইন্ড।
জীবন চালানোর জন্য আমরা অনেকেই অন্যের চাকরি করি। করতেই হয়, নইলে যে পেট চলে না। আবার চাকরি করার সময় একটু আধটু ফাঁকিবাজি করতে কার ইচ্ছা না হয়, বলুন। হয়তো বস আপনাকে একটা কাজ দ্রুত করতে বলেছেন। কিন্তু দ্রুত মানে তো কিছুটা শর্টকাট মেথড লাগেই। হয়তো কাজটি দ্রুত করলে অফিসের উপকার হবে। কিন্তু আপনি তো মাস্টারমাইন্ড! অফিসের ভালোর জন্য হলেও কেন দ্রুত করবেন? উল্টো এমনভাবে, এত বিস্তারিত উপায়ে কাজ করা শুরু করলেন, যেন অফিস টাইম শেষ হলেও কাজ শেষ না হয়! সেক্ষেত্রে পরের দিনটাও ওই কাজ দেখিয়েই কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! এ ছাড়া অফিসে কাউকে ল্যাং মেরে লিডারশিপে চলে যেতে পারলে তো কথাই নেই। এভাবেই আপনিও হয়ে উঠতে পারেন মাস্টারমাইন্ড।
এ ছাড়া শপিংমলে ঢুকলেই আপনার যদি পুরো মার্কেটের সব কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে বা টেলিভিশন দেখতে বসলে ভূমিকম্প হলেও উঠতে ইচ্ছা না করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে–আপনিই মাস্টারমাইন্ড!
তাহলে আর দেরি কেন? সব লক্ষণ এভাবেই মিলিয়ে দেখে নিন, প্লিজ। এরপরই বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচু করে, লজ্জাবনত মুখে, ঈষৎ হাসি ঠোঁটে মেখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিতে পারবেন। লিখতে পারবেন–‘তোমরা হয়তো জানো না…আমিই মাস্টারমাইন্ড!’

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ