সমীকরণ
অংকের হিসেবগুলো গোলমেলে সেই প্রথম থেকে
দশকের চেয়ে একক শক্তিশালী
তার অধিক শূন্য-
অংকের হিসাবে মানহীন অধীশ্বর!
সেই প্রথম থেকে গোলমেলে গাণিতিক হিসেব
সমীকরণে লঘিষ্ট-গরিষ্ঠের উৎপাতে বুঝিনি
যোগ-বিয়োগের পাতায় ভাগটাই মুখ্য;
ভরের হিসাবে নির্ভার নয় কিছু
বিভাজ্যে থেকে যায় বিভেদ!
ধারাপাতের হাতেখড়িতে গোলমেলে গাণিতিক হিসেব
সেই প্রথম থেকে অবুঝ বোধ না বুঝার মাঝে
জীবনের হিসাবে বুঝেছে একটাই রঙ-রক্ত,
রক্তের রঙে লঘিষ্ট নেই কোন-নেই গরিষ্ঠ
সাদা চোখে মানুষ সব এক, রক্তই মানুষের অর্থ।
কাঁটারণ
দু’নলা বন্দুকের নিচে কেটে যায়
গোলাপ আর ক্যাকটাসের সারাবেলা…
বাগান বিলাসের ঘ্রাণে মোড়লের ঘর-
নিড়ানির ঘামে উপড়ে যায় আগাছা আর পতঙ্গ!
কাকতাড়ুয়ার ফিতায় হাত ছিল না যার
পাঁজায় নিয়ে ফসলের উপহার
বুলেটের ধোঁয়ায় উড়ায় উচ্ছিষ্ট অহংকার!
মাটিতে লেগে থাকে ক্যাকটাস
মাটিতে ঝুলে থাকে গোলাপ
খড়ের গাঁদায় চলে কাঁটাবন্দুকের শিকার…
অনলের মত নল নিয়ে কাঁধে নত চলে যায় গোলাপের সুবাস…
বিরাম
গল্প শেষে মিলন বা বিয়োগই প্রধান
অসমাপ্তেও টানা থাকে সমাপ্তরেখা।
জীবনের সব গল্পের শেষ থাকে না,
কোন কোন বেদনার রঙে স্পষ্ট নয় নীল-
আলোকপথে কোন কোন ঐশ্বর্য
বিষাদে বিলীন!
কোন কোন জীবনের গল্প উপসংহারহীন
আটকে থাকে অসমাপ্তে পরিত্যেক্ত সাঁকোর মত।
জীবনের গায়ে সাইনবোর্ড লাগানো যায় না
যদি যেতো মানুষ পড়তে পারতো
হৃদয়ের হলুদ ত্রিপলে লেখা সাবধান বাণী…
‘এই সাঁকো দিয়ে চলাচল বিপদজনক, যত্নে ব্যবহার করুন’
ঈশ্বররেণু
আফিমের গন্ধ নিয়ে ঈশ্বররেণু
জমে উঠে পথে-উঠানে
এই রাত্রির গভীরেও সচল আয়না।
দালানের বাতি দোলে উঠে বিহ্বল
বৃষ্টি জানে সৃষ্টির মৌলিক রহস্য!
মগডাল বেয়ে শিকড়ে শিকড়ে সে’ও ঈশ্বর,
আফিমের গন্ধ নিয়ে ঈশ্বররেণু
জমে উঠে মাঠে-উঠানে
প্রতিফলিত ব্যাকরণে…
এই বৃষ্টিতে আশালতারা কথা দেয়
এই বৃষ্টিতেই আশালতারা ভেসে যায়
এই বৃষ্টিতে নেশা জাগিয়ে মনগন্ধম
নিষিদ্ধ রেখে নেশা নিয়ে ফিরে যায়
বাতি জ্বালিয়ে নাবিক মন বুকের উজানে
ফিরে ফেরারী অসুখ নিয়ে দীর্ঘদর্পণ ছায়ায়!
এই শহর জলাবদ্ধতার মত ভালোবাসায় টানে
এই শহর জলের মত ভালোবেসে স্বপ্ন আনে না
আশালতার আকাশে আশাহীন ডুব দিয়ে মেঘঘামে
এই রাত্রির বিরানে বৃষ্টির নেশাঘ্রাণে স্বপ্ন হারিয়ে
কোন কোন মনপোড়া হয়ে উঠে সৃষ্টিছাড়া ঈশ্বর বিমুখ!
তৃষ্ণা
দেখিনা কতদিন তাঁরে শুনি নাই সে পরাণের স্বর
আবার যদি দেখা পাই টেনে নেবো কানে নিক্বণ
ক্যামন করে হাসো তুমি আরেকবার দেখিতে স্বাদ।
আরেকবার দেখিতে স্বাদ ক্যামনে নড়ে উঠে ঘাস
ঘুমন্ত ফসফরাস মণ্ডমত্ত প্রেম ছেড়ে অদুরে
আলোর নিশানে উড়িয়ে দেয় রাত্রির অমনিবাস
ক্যামনে ফিনকি বাতাসে সশব্দে জেগে উঠে পঙ্খী
আকাশের বুক ছেয়ে মেঘদিশারীর মত ঘুরে
আরেকবার দেখিতে স্বাদ ক্যামনে উড়ে চুল
সুরের বাতাসে ভুলে গাল ছুঁয়ে করে একই ভুল
দেখেনা কতদিন একহারা বুকের জমিন, দেখা দাও…
কতদিন শুনি না সে তান মুচড় দিয়া উঠে পরাণ
নিঃশ্বাস ছাড়া এতদিন ক্যামনে বেঁচে ছিলাম!
এক জনম? কতদিন দেখিনা তাঁরে, শুনি না সে
এভাবে কী থাকা যায়, পরাণের পরাণ ছাড়া বেঁচে?
কতদিন শুনি না তোমারে, দেখিনা কতদিন
চোখের মরুতে ডুব-সাঁতারে ছাতি ফেটে যায়
কতদিন দেখি না তোমারে, শুনি না কতদিন
ফুসফুস ভরা বালি আমার নিঃশ্বাসে রক্ত ঝরায়
দেখা দাও, দেখা দাও, তুমি আমার পরাণের ঘর
দেখা দাও, দেখা দাও, ক্যামনে এই তৃষ্ণা বুঝাই…
জননী
তুমি ঘুমাও জননী
বুকে নিয়ে সূর্যগ্রাম
হৃদয়ে নেয়া হৃদয়ের সন্তান
তোমার আঙ্গুলের পীঠে দুঃখরা সেই
বেঁচে আছে নিদারুণ সুখে…
রক্তগোলাপ
বেদনার ফুলদানীতে সযত্নে ছুঁয়ে
সাজিয়ে রাখি রক্তগোলাপ!
ঘ্রাণ নেই তার, দৃশ্যই আবদার…
দিন গেলে চড়াদামে কিনে ফিরি
সস্তা হাসির সুগন্ধি পাপ!