১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম আদালতে সহিংসতার মামলায় ৬৩ আইনজীবীর জামিন

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চট্টগ্রামে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুরকে ঘিরে সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় ৬৩ আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সরকার হাসান শাহরিয়ার তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে আসামিরা আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন আবেদন করেন। পরে এক ঘণ্টা ধরে শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। এর মধ্যে একজন আইনজীবী রয়েছেন, যিনি একই ঘটনায় দায়ের হওয়া পৃথক আরেকটি মামলার আসামি। তাঁকেও দুই মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন ঘিরে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার আসামি ৬৩ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। এক হাজার টাকার বন্ডে আদালত মামলার চার্জশিট দায়ের না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।’

আসামি পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শুভ্রজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘মামলাটি ছিল মূলত আমাদের নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বড় ভাইয়ের করা ভাঙচুর এবং বিস্ফোরক আইনের মামলা। এখানে ৬৩ জন আইনজীবীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আদালতকে আমরা আমাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। এতে বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট হয়ে এই মামলার চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত ৬৩ জন আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন।’

এদিকে আদালতের আদেশের পরপরই আইনজীবীদের একাংশ আদালত চত্বরে ‘নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর, ইসকনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, আলিফ ভাই কবরে খুনি কেন বাইরে’—এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা আসামি আইনজীবীদের জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তবে আগে থেকে আদালত এলাকায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা জোরদার থাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সকাল থেকে আদালতে প্রবেশের দুটি পথেই চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালত এলাকায় যেতে দেয়। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন আসা-যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ ছিল। আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে এজলাস পর্যন্ত দুপাশে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন সনাতনীরা। ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল সনাতনী আইনজীবীরা। এর আগে তাঁরা চিন্ময়ের হয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেন। বিক্ষোভের একটি পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন স্থাপনা। সংঘর্ষ চলাকালে আদালতের অদূরে মেথরপট্টি এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যাসহ পৃথক ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১১৬ জনের নামে ও অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই খানে আলম। ওই মামলায় ৬৩ জন সনাতনী আইনজীবীকে আসামি করা হয়। মামলার পর আত্মগোপনে থাকেন অভিযুক্তরা।

 

মামলার আসামিদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ, আইনজীবী চন্দন দাশ, রুবেল পাল, সুমন আচার্য্য, আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ