[english_date]

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সারাদেশের সর্বশেষ আপডেট

সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, নার্গিস, ফণী ও বুলবুলের মতো আম্ফানও একটি ব্যবহৃত নাম। এই নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান দুর্বল হয়ে গভীর স্থল নিম্নচাপ আকারে রাজশাহী-পাবনা অঞ্চলে অবস্থান করছে। তাই মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এখনও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হওয়া বইতে পারে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ কেরে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। এরপর থেকে আম্ফান কেন্দ্রিক আর কোনো বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে না সংস্থাটি।

সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যশোরে দুজন, পটুয়াখালীতে দুজন, ভোলায় দুজন, পিরোজপুরে একজন, সন্দ্বীপে একজন ও সাতক্ষীরায় একজন রয়েছেন।

ঝিনাইদহ : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামে ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে নাদিরা বেগম নামে একজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের সময় তারা ঘরে ছিলেন। রাতে ঘরের পাশে থাকা একটি গাছ ভেঙে পড়ে ঘরের উপর। এ সময় ওই নারী নিহত হন। পরে সকালে ফায়ার সার্ভিস এসে মরদেহ উদ্ধার কাজ করে।

এদিকে ঝিনাইদহে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সারাদিন দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হয়। এতে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকে। রাত ১১টার পর আম্ফানের তাণ্ডব শুরু হয়ে সারারাত চলে ঝড়। সকালে বাতাসের গতিবেগ কমে।

প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে মাঠে কেটে রাখা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে পানি জমে সব ধান তলিয়ে গেছে। এখন পানিতে হাতড়িয়ে ধান নিতে হচ্ছে।

বরগুনা : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বরগুনার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ডুবে গেছে ওইসব এলাকার ঘরবাড়ি। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম এবং ভুট্টার ক্ষেত।

বরগুনার বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার গাব্বাড়িয়া, পদ্মা, খলিফার হাট, মাছের খাল, কালমেঘা, কাঁঠালতলীসহ সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িরচর, ছোট লবণগোলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে।

খুলনা : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে খুলনার উপকূলীয় এলাকা। সিডর ও আইলায় বিধ্বস্ত খুলনায় এবারও কয়েকশ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার অন্তত অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার মাছের ঘের ও ফসলি জমি।

এছাড়া হাজার হাজার গাছ উপড়ে গেছে। সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অনেক এলাকা। সবমিলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে গোটা উপকূলীয় অঞ্চল।

বাতাস ও বড় বড় নদীগুলোর জোয়ারের তোড়ে খুলনার কয়রা উপজেলার ১১টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, মহারাজপুর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজশাহী : সুপার সাইক্লোন আম্ফান দুর্বল হয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করেছে বৃহস্পতিবার ভোরে। এরপর আরও দুর্বল হয়ে যায় আম্ফান।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আম্ফান প্রবেশ করে এই অঞ্চলে। ওই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। বাতাসের এই গতিবেগ ছিল মাত্র তিন মিনিট। এরপর ধীরে ধীরে কমে আসে বাতাসের বেগ।

এরআগে আম্ফানের প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে শুরু হয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮১ মিলিমিটার।

এদিকে আম্ফানে রাজশাহী ছাড়াও নওগাঁ ও চাপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে ঝরে পড়েছে বেশিরভাগ আম। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও প্রাণহানীর কোনো খবর মেলেনি।

আম্ফানে রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিশ্চিত করে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (২০ মে) রাতে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বিকেলে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম , নলেরচর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম, সুখচর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম, চরঈশ্বর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম, ক্যারিংচর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

যশোর : ১৩৫ কিলোমিটার বেগে যশোরে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বুধবার (২০ মে) সারাদিন থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলেও রাতে প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইছে। রাত ৮টার পর থেকে বাড়তে থাকে ঝড়ের গতিবেগ।

যশোরে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল। শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলোর অর্ধশত পয়েন্ট ভেঙে গেছে। জনপদে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়াও ঝড়ের কবলে পড়ে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় প্রতানগর. ক্রীউলা. আনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের অইশে পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে চাকলা, দিঘলারাইট, কুড়িকাউনিয়া, হিজলা, কোলা, শ্রীউলা, হাজরাকালি, দয়ারগাট, বিছট, বাহাদুরপুর গ্রামসহ আরও অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ