গ্যাসের অভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সঙ্কটে পড়েছে। গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে ধারাবাহিকভাবে ঘাটতি বাড়ার কারণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। একদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি বাড়ছে অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। ফলে শিল্প, বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক গ্রাহকরা লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তিতে পড়ছেন। আবার বেশি দামে উত্পাদিত বিদ্যুৎ কিনতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সক্ষমতা থাকলেও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উত্পাদিত হচ্ছে। সঙ্কট মোকাবেলায় এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকলেও ২০১৮ সালের আগে এটি থেকে গ্যাস আসবে না। আরো প্রায় পৌনে দুই বছর এ সঙ্কট থাকবে। এ অবস্থায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি সঙ্কট তীব্র হওয়ায় নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দিবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
সূত্র জানায়, দেশে ১০১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও চালু রয়েছে ৯৯টি। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫টি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। চালু থাকা কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ হাজার ৮৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৬২৮ মেগাওয়াট। এটি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ফার্নেস তেলে দৈনিক ২ হাজার ৬৭৫ এবং ডিজেলে ৯৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশের বেশিই অব্যবহূত থাকছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার পিক আওয়ারে (বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা) ৭ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে ৬ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। গ্যাস উত্পাদনের জন্য ওই দিন পেট্রোবাংলা ১ হাজার ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৪ হাজার ৬৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। অর্থাত্ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও গ্যাস সঙ্কটের কারণে ২ হাজার ৯৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। এছাড়া পিক আওয়ারে গ্যাস সঙ্কটের কারণে গ্যাসভিত্তিক আরো ৮০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। এর আগের দিন শনিবারে পিক আওয়ারেও গ্যাসভিত্তিক ৯০১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। ওই দিন পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল ৯২০ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পেয়ে বিদ্যুৎ উত্পাদনে হিমশিম খাচ্ছে এই খাতের নেতৃস্থানীয় সরকারি সংস্থা পিডিবি। চলতি বছর গ্রীষ্মে পিডিবির চাহিদা মত একদিনও গ্যাস দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। চাহিদার অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস পাওয়ায় বিদ্যুৎ উত্পাদনে বড় ধরনের বাধা তৈরি দিয়েছে। এই বাধা দূর করতে ফার্নেস তেল ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
এই অবস্থায় আপাতত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পিডিবিকে অনুত্সাহিত করেছে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা। নতুন করে আর কোনো বিদ্যুৎকন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিষয়টি নিশ্চিত করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গ্যাস সঙ্কটের বিষয়টি জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।