১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

খানজাহান আলীর ‘ধলাপাহাড়’ মারা গেছে

বাগেরহাটের ঐহিত্যবাহী খানজাহানের (রহ.) মাজার দিঘির কিংবদন্তী কুমির প্রজাতির শেষ বংশধর ‘ধলাপাহাড়’ মারা গছে। বৃহস্পতিবার সকালে দিঘির পানিতে কুমিরটির মৃতদেহ ভাসতে দেখতে পায় মাজারের খাদেম ও দিঘির পাড়ের বাসিন্দারা। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হলে তারা কুমিরটি পাড়ে তোলে।

মাজারের খাদেম হুমায়ুন কবির ফকির জানান, শতাধিক বছর ধরে খানজাহান (রহ.) মাজার দিঘিতে বংশ পরম্পরায় ‘ধলাপাহাড়’ ও ‘কালাপাহাড়’ নামের কুমিরের বাস ছিল। কয়েক বছর আগে কালাপাহাড় মারা গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে মাজার দিঘির পাড়ের বাসিন্দারা সকালে দিঘিতে মৃত অবস্থায় কুমিরটিকে ভাসতে দেখে। পরে প্রশাসনের লোকদের জানানো হলে পুলিশ এসে কুমিরটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন জানান, মৃত কুমিরটি লম্বায় প্রায় ৯ ফুট। এই প্রজাতির মিঠাপানির কুমির সাধারণত ১১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। কুমিরটির বয়স আনুমানিক ১০০ বছর।

Pan Statits (বর্বি জাতীয় রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে মাদি (স্ত্রী) এই কুমিরটির মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।

উদ্ধারের পর দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাজার প্রাঙ্গণে কুমিরটির ময়না তদন্ত চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে খানজাহান আলী মাজারের কুমিরটি মারা যাওয়ার খবরে পর্যটকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় ৭শ বছর ধরে খানজাহান (রহ.) মাজারে মিঠা পানির কুমিরগুলো বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। কিন্তু সর্বশেষ ‘ধলাপাহাড়’ মারা যাওয়ায় এই মাজারের ধলাপাহাড়-কালাপাহাড়ের বংশধর শেষ হয়ে গেল।

এই দিঘিতে এখন ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা ২টি মিঠা পানির কুমির রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

বাগেরহাট সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, খানজাহান (রহ.) মাজারের কুমিরগুলো বাগেরহাটের সংস্কৃতির অংশ। তাই এই কুমির ও কংঙ্কাল সংরক্ষণ করে জাদুঘরে রাখা হবে।

১৪০১ সালে এই অঞ্চলে হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) আগমন। তার হাতে খলিফতাবাদ নগর প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী ইতিহাসের সঙ্গে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের নাম জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্যভাবে।

খানজাহান আলী খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে সুলতানী শাসনামলে বাগেরহাটে খলিফতাবাদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। ঠাকুরদীঘি নামে পরিচিত এই দীঘিটি সংস্কার করে ওই সময়ই ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে এক জোড়া কুমির ছাড়েন তিনি।

এই কুমিরযুগলের বংশধরেরা গত প্রায় ৭০০ বছর ধরে একই নামে দীঘিতে বিচরণ করে এসেছে। মাজারের এই কুমির নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেক কিংবদন্তী ও লোককাহিনীও তৈরি হয়েছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ