কে কাকে ছাড়ছে, বিএনপি জামায়াতকে; নাকি জামায়াত বিএনপিকে? এমন প্রশ্ন শহর-গ্রামের চায়ের কাপে ঝড় তুললেও, স্বার্থের প্রয়োজনে আসলে আপাতত কেউ কাউকেই ছাড়ছে না।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ বস্তুত এমনই। তবে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেই যে পাল্টে যাবে বিএনপি’র রাজনীতির হিসাব-নিকাশ তারও জানান দিয়েছেন তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর থেকেই ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও খবর রটেছে, ১৫ মিনিটের ওই একান্ত সাক্ষাতে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মোদী নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
এর ক’দিন বাদেই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধতার কঠোর সমালোচনা করলে শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে নাকি সঙ্গে নিয়েই পথ চলবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘জোট এখনো ভাঙ্গে নাই, কোন পরিবর্তন হয় নাই। কারণ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিশদল বসে নেবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যদি সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ করে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি অন্যরকম হবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, জামায়াত-বিএনপি একে অপরের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল বলেই সঙ্গত্যাগ আপাতত সম্ভব নয়।
তবে জামায়াত-নির্ভরতার অভিযোগকে অপপ্রচার হিসেবেই দেখছেন বিএনপি’র নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, জামায়াত কোন দিনই একক শক্তিতে সাধারণ নির্বাচনে ২-৩ টার বেশি আসন পায় নাই। আর বিএনপি ভালো করেই জানে আন্দোলন করতে হলে জামায়াতের কর্মীদের প্রয়োজন আছে। এছাড়া বিএনপি’র সাথে জামায়াতের সম্পর্কের বিষয়টিকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা শুধুই ‘রাজনৈতিক’ বলে দাবি করলেও, প্রবীণ বিশ্লেষকের মত আলাদা। জামাতায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে তাদের নাশকতা ও সহিংসতার মাশুল বিএনপিকেই গুনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই ইতিহাসবিদ।