৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেন কর্মীরা অফিসে আসতে চান না?

আজ বৃহস্পতিবার। অফিসযাত্রীদের কাছে এই দিন মানেই যেন চাঁদরাত! আজকের দিনটা পার হলেই যে মিলবে দু’দণ্ড স্বস্তি। সাতসকালে উঠতে হবে না প্রিয় বিছানা ছেড়ে, যেতে হবে না অফিসের গেটে!
কিন্তু কেন মানুষের মধ্যে এত বেশি অফিসবিমুখতা!
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তুনাজ্জিনা জাহান। তিনি বলেন, ‘অফিসে একজন কর্মীকে প্রতিদিন আট থেকে নয় ঘণ্টা থাকতে হয়। সুতরাং এখানকার পরিবেশ ভালো হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে কলিগদের (সহকর্মী) আন্তরিকতা এবং সহানুভূতিশীল হওয়াটাও সমভাবে জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ অফিসেই এমনটি দেখা যায় না। উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন, তারাও কর্মীদের সমস্যাগুলো সব সময় বুঝতে চান না। এতে আস্তে আস্তে অফিসের প্রতি এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়।’
‘এপ্রিসিয়েশন’ বা মূল্যায়নের অভাবও কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহা তৈরি করে, ফলে তাঁরা অফিসে আসতে চান না। তুনাজ্জিনা বলেন, ‘আমি যেমন অফিসের সমস্যা বুঝব, অফিসকেও তেমনি আমার সমস্যা বুঝতে হবে। আমার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।’
এর বাইরেও কর্মীদের অফিসে আসতে না চাওয়ার একাধিক নেপথ্য কারণ রয়েছে।
অপ্রিয় সহকর্মী
ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক নিয়ে কাজ করা শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ফ্লেক্স ইনডেক্সের এক সমীক্ষায় ৬০ শতাংশ কর্মচারী অফিসে আসতে না চাওয়ার পেছনে ‘টিমওয়ার্ক’ বা দলগত কাজ এবং সামাজিকীকরণকে দায়ী করেছেন।
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন মন-মানসিকতার মানুষ থাকেন। বন্ধুদের সঙ্গে মতের মিল হলেও অনেকক্ষেত্রে সহকর্মীদের বেলায় তা খাটে না। অনেক সময় বাধ্য হয়ে অপছন্দের সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করতে হয়। এ কারণে অনেকের মধ্যে অফিস ভীতি কাজ করে।
মনোযোগে ব্যাঘাত
আমাদের দেশের যানজটের খ্যাতি বিশ্বময়! দেড়-দুই ঘণ্টার তীব্র জ্যাম ঠেলে অফিসে প্রবেশ করেও যদি অপ্রয়োজনীয় আলাপ আর হাসি-ঠাট্টার ভিড়ে কাজে মন বসাতে না পারেন, তাহলে অফিস যাওয়ার কোনো অর্থ কি থাকে! এটি কর্মীদের অফিসবিমুখতার আরেকটি বড় কারণ।
কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে একেক অফিসে একেক রকম পরিবেশ থাকে। একজন ব্যাংকারের কর্মস্থলের সঙ্গে যেমন বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মীর কাজের ধারা, সময় বা ধরণ কিছুই মিলবে না। তবে বিশৃঙ্খল পরিবেশে কোনোভাবেই কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। এতে একটি কাজের ব্যাপ্তিও বেড়ে যায়, একটি কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের বেশি লেগে যায়। ফলে কর্মী অফিসে আসতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন।
আনন্দের অভাব
একজন মানুষ যখন নতুন কোনো অফিসে যোগ দেন, তখন তাঁর কাছে অফিসের চা অনেক সুস্বাদু লাগে। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, অফিসের বাকি সবকিছুর মতো সেই চায়ের স্বাদও তাঁর কাছে ফিকে হতে থাকে। এর কারণ হলো, নতুনত্ব বা অভিনবত্বের অভাব এবং প্রতিদিন একই রুটিনের পুনরাবৃত্তি। অফিসের গৎবাঁধা কাজ ব্যক্তির নিজের জীবনকেও একঘেয়ে করে তোলে। ধীরে ধীরে সবকিছুতে বিরক্তি চলে আসে এবং অফিসের প্রতি তার মধ্যে বিতৃষ্ণা কাজ করে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ