প্রতিটা জিনিসের নিজস্ব একটা রূপ আছে। তেমনি দুঃখবোধেরও একটা নিজস্ব রূপ আছে। দুঃখবোধের বাহ্যিক প্রকাশ হলো কান্না। আপনি যখন কান্না করেন তখন মনে করা হয় আপনি মানুষিক ভাবে দুর্বল আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই অনেকেই কান্না ব্যাপারটিকে নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখেন। কিন্ত এই ধারণাটি একদম সঠিক নয়। তারাই মানসিকভাবে বেশি শক্তিশালী যারা তাদের দুঃখের আবেগকে প্রকাশ করতে ভয় পায় না।
আপনি যখন প্রচুর আনন্দে থাকেন তখন কি সুখী চেহারাটা লুকিয়ে রাখেন ? যখন উত্তেজিত কোনো খবর পান তখন কি মনের উত্তেজনা লুকিয়ে রাখেন ? তাহলে কষ্ট পেলে কাঁদবেন না কেনো ? যারা নিজের দুঃখবোধকে লুকিয়ে রাখেন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সবথেকে বেশি ধোঁকা দেন। কান্না দুর্বলতার লক্ষণ নয়। আপনি যে মানুষ এবং আপনার অনুভূতি আছে তাকেই নির্দেশ করে কান্না।
মানুষ যখন তার চূড়ান্ত আবেগকে মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে তখন সেটা শারীরিক এবং মানুষিক দুইটার জন্যই ক্ষতিকর। মানুষ যখন কাঁদে তখন চোখের পানির সাথে তার শরীর ও মস্তিষ্ক থেকে স্ট্রেস, উদ্বিগ্নতা, অনুশোচনা ও হতাশা বের হয়ে যায়।
কান্না আত্মাকে পরিষ্কার করে, মনকে সমৃদ্ধ করে এবং স্ট্রেসের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক আবেগকে দূর করতে সাহায্য করে। কান্নার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা আছে কারণ এর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কান্না আমাদের মস্তিষ্কের এন্ডোরফিনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে, যা ভালো অনুভব করার হরমোন এবং প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। কান্নার ফলে ম্যাঙ্গানিজের মাত্রা কমে। ম্যাঙ্গানিজের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে শরীর এবং মন ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠতে পারে। কান্নার ফলে খারাপ অনুভূতি থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং সমস্যাটির বিষয়ে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা যায়।
একজন মেয়ে যখন কাঁদে তখন মনে করা হয় সে অস্তির এবং অন্যের মনোযোগ পাওয়ার জন্য কাঁদছে। একজন ছেলে কাঁদলে মনে করা হয় সে কাপুরুষ, দুর্বল। এজন্যই নারী পুরুষ উভয়ই তাদের দুঃখবোধের আবেগকে মনের গভীরে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যারা মানুষের সামনে তাদের দুঃখের আবেগকে প্রকাশ করতে পারে তাদের তো সাহসী বলা যেতেই পারে !
কান্নার জৈবিক ক্ষমতাটির বিষয়ে উপলব্ধি করা উচিৎ আমাদের সবার কারণ কান্না দুর্বলতার লক্ষণ নয় বরং অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রতীক।