৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কম্পিউটারের দুনিয়ায় আসছে বিপ্লব: একদিকে কোয়ান্টাম, অন্যদিকে জেটা!

মাসখানেক আগের কথা। গত আগস্ট মাসের শেষের দিক। হুট করেই একটি দেশ এমন এক কম্পিউটার বানানোর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে বসল যে, এখন পুরো কম্পিউটার দুনিয়াই তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। এটি এমনই এক কম্পিউটার, যা এর আগে বানায়নি কেউ। আর বানিয়ে ফেলতেই পারলে আজকের সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটারও সেটির কাছে হয়ে যাবে খেলনা!
যে দেশ এমন ঘোষণা দিয়ে বসে আছে, সেই দেশটির নাম শুনলে কেউই ঠিক অগ্রাহ্য করার বা উড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারবে না। দেশটির নাম জাপান। গত আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ দেশটির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিজ্ঞান‑প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছে, আগামী বছর থেকেই নতুন ‘জেটা‑ক্লাস’ সুপারকম্পিউটার তৈরির কাজে হাত দিতে যাচ্ছে তারা। এই সুপারকম্পিউটার তৈরির স্বপ্নই এতদিন সবাই দেখেছে, কেউ বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি। বলা হয়েছে, এই সুপারকম্পিউটার কাজ করবে জেটাফ্লপস গতিতে। পুরোপুরি কর্মক্ষম হলে এই সুপারকম্পিউটার আজকের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটারের চেয়েও ১০০০ গুণ বেশি গতিতে কাজ করতে পারবে। বুঝুন তবে!
জাপান বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই নতুন ‘জেটা‑ক্লাস’ সুপারকম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব হবে। এই সুপারকম্পিউটার বানাতে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে। জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিটার তৈরি করতে পারলে সামনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা‑কেন্দ্রিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরির দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে জাপান। সেটা এতটাও হতে পারে যে, দেখা গেল জাপানের ধারে‑কাছেও কেউ নেই।
জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার কী?
এটি বোঝার জন্য শুরুতেই জানতে হবে ফ্লোটিং‑পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড বা এফএলওপিএস সম্পর্কে। বাইনারি ডিজিটকে যেমন সংক্ষেপে আমরা বিট বলি, তেমনি একেও চাইলে উচ্চারণের সুবিধার্থে ফ্লপস বলা যেতে পারে। এটি দিয়েই নির্ধারিত হয় যে, কম্পিউটারের শক্তি আসলে কতটা। অর্থাৎ, কম্পিউটারের ক্ষমতা বা শক্তিমত্তার পরিমাপক হলো ফ্লোটিং‑পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড বা এফএলওপিএস বা ফ্লপস। এক্ষেত্রে একটি ফ্লোটিং‑পয়েন্ট অপারেশন হলো একটি গণনা। সাধারণত প্রতি সেকেন্ডে কতটি গণনা করতে পারে একটি কম্পিউটার, তা অনুযায়ীই সেটির ক্ষমতা নির্ধারিত হয়।
আজকালকার সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারেরও গতি হলো এক্সাফ্লপস মাত্রার। এর অর্থ হলো ১ সেকেন্ডে ১ কুইন্টিলিয়ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে এগুলো। প্রশ্ন হলো, ১ কুইন্টিলিয়ন তাহলে কী? ১‑এর পর ১৮টি ০ যোগ হলে যে পরিমাণ হয়, তা হলো ১ কুইন্টিলিয়ন। কী, গুণতে সমস্যা হচ্ছে? হ্যাঁ, এই পরিমাণ গণনাই এখনকার সুপারকম্পিউটার ১ সেকেন্ডে সমাধা করতে পারে।
এক কথায়, জেটা‑ক্লাস হলো এখনকার সুপারকম্পিটারের বাপ। এটি কাজ করবে জেটাফ্লপস গতিতে। যখন একটি সুপারকম্পিউটার ১ জেটাফ্লপস গতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে, তখনই সেটি হবে জেটা‑ক্লাস কম্পিউটার। ১ সেকেন্ডে ১ সেক্সটিলিয়ন গণনা সম্পন্ন করতে পারলেই হবে ১ জেটাফ্লপস। ১ সেক্সটিলিয়ন হলো ১‑এর পর ২১টি ০ যোগ হলে যে পরিমাণ হয়, তা।
আশা করা যায়, জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটারের মাহাত্ম্য এখন কিছুটা হলেও মূর্ত হয়েছে।
জাপানের জেটা‑ক্লাস নিয়ে যা জানা গেল
জাপানের নতুন এই সুপারকম্পিউটারের নাম হতে পারে ‘ফুগাকু নেক্সট’। ধারণা করা হচ্ছে, জাপানি কোম্পানি আরআইকেইএন ও ফুজিৎসু মিলে এই সুপারকম্পিউটার তৈরি করবে। এই দুই কোম্পানিই এর আগে ‘ফুগাকু’ নামের আরেকটি সুপারকম্পিউটার তৈরিতে জড়িত ছিল। ‘ফুগাকু নেক্সট’ হবে সেই ফুগাকু সিরিজেরই উত্তরসূরি। সংশ্লিষ্ট কিছু সূত্র বলছে, ফুগাকু ও ফুগাকু নেক্সটের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য হয়তো ফুজিৎসুর নকশা করা উপাদানই নতুন সুপারকম্পিউটারে ব্যবহার করা হবে। তবে এই বিশেষ উপাদানগুলো কী ধরনের, সে বিষয়ে মুখ খুলছে না কোনো পক্ষই। আবার এই প্রকল্পে এএমডি, এনভিডিয়া বা ইনটেলের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোও যুক্ত হতে পারে বলে গুঞ্জন আছে।
জাপান এর আগে ফুগাকু নামে যে সুপারকম্পিউটারটি বানিয়েছিল, সেটির গতি ০ দশমিক ৪৪ এক্সাফ্লপস। ফুগাকু একসময় বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটার ছিল। তবে ২০২২ সালে আমেরিকার ‘ফ্রন্টিয়ার’ নামের সুপাকম্পিউটার ফুগাকুকে হারিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে। টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে অবস্থিত এই সুপারকম্পিউটারের গতি ১ দশমিক ২ এক্সাফ্লপস। তবে এখনও বিশ্বের প্রথম ৫টি সেরা গতির সুপারকম্পিউটারের তালিকায় আছে ফুগাকু।
এবার ফুগাকু নেক্সট তৈরির মূল কারণ হলো, সুপারকম্পিউটারের দৌড়ে জাপানের সবার সামনে থাকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতেও এগিয়ে থাকতে চাইছে জাপান। বিশ্লেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও এ‑সংক্রান্ত গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বে অন্য সব দেশকে পেছনে ফেলতেই জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করেছে জাপান। গত শতকের সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের দশকের জাপানের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জনের ইতিহাস মনে থাকলে অবশ্য এই জাপানি উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সেই সক্ষমতাও জাপানের আছে ভালোমতোই। আর এ কারণেই এই প্রকল্পে অকাতরে অর্থ ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে জাপান।
এ বিষয়ে আরআইকেইএন সেন্টার ফর কমপিউটেশনাল সায়েন্স‑এর পরিচালক সাতোশি মাতসুওকা বলেছেন, ‘অন্য সব দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য উপযুক্ত সুপারকম্পিউটারের প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। আমরা তাদের অর্জিত জ্ঞানের পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই এবং জাপানের মূল প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে এমন মাত্রায় নিতে চাই, যা আন্তর্জাতিক বাজারে আলোড়ন তুলবে।
তবে নতুন জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরিতে ঝক্কিও কম নয়। বিশেষ করে নতুন সুপারকম্পিউটারকে দক্ষভাবে ব্যবহার করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের। এ বিষয়ে গত বছরই সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরি করে তা চালাতে গেলে বিপুল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের ধারণা হলো, এ ধরনের জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার চালাতে প্রায় ২১টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত মোট শক্তির সমপরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হতে পারে!
বোঝাই যাচ্ছে যে, জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার বানানোর ঘোষণা দেওয়া যতটা সহজ, বানানো ততটা নয়। তবে এ ক্ষেত্রে জাপানের পূর্ব অভিজ্ঞতা যেহেতু বেশি এবং অন্য কেউ এটি তৈরির ঘোষণা দেওয়ার সাহসও করতে পারছে না, ফলে অনুমান করাই যায় যে, হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারই হতে চলেছে ফুগাকু নেক্সট!
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কী খবর?
বছর ছয়েক আগে থেকেই কম্পিউটারের দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে। সব বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই এই কম্পিউটার বানানোর জন্য আদাজল খেয়ে লেগে পড়ে। সবারই লক্ষ্য দাঁড়ায় অন্যদের আগে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন। যদিও এখনও কোনো প্রতিষ্ঠান, সে গুগল হোক বা আইবিএম–কেউই কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করতে পারেনি।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার দেখতে সাধারণ কম্পিউটারের মতো নয়। অনেক ধাতব সিলিন্ডার ও প্যাঁচানো তারে তৈরি কিম্ভূতকিমাকার এই যন্ত্রটি। কোয়ান্টাম মেকানিকসের জটিল সমীকরণ কাজে লাগিয়ে গাণিতিক সব সমস্যার সমাধান করবে এটি।
সাধারণ কম্পিউটার কাজ করে দুটি বাইনারি সংখ্যা ০ ও ১ দিয়ে। এই কম্পিউটারগুলো হয় ০, না হয় ১-এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। একসঙ্গে দুটি সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার আলাদা আলাদা করে তো বটেই, একই সময়ে একই সঙ্গে ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্বও করতে পারে। এককথায়, ০ ও ১-এর মধ্যকার বিভিন্ন অবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এই কম্পিউটার। এবং এই কারণে একই সঙ্গে একাধিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। যেখানে এখনকার প্রচলিত কম্পিউটার একটি কাজ শেষ করে আরেকটি সমাধান করে।
বিশেষ এই কম্পিউটারের মৌলিক একককে বলা হয় কোয়ান্টাম বিটস বা কিউবিটস। প্রথাগত কম্পিউটার বিটসের চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজ করতে পারে কিউবিটস। তত্ত্বমতে, কোয়ান্টাম মেকানিকসের দুটি কৌশলে কাজ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এর একটি হলো সুপারপজিশন। অন্যটি হলো এনট্যাংগেলমেন্ট পদ্ধতি।
গবেষকেরা বলছেন, গণিতের দুর্বোধ্য সব সমস্যা এক তুড়িতে সমাধান করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। মূলত শিল্প খাতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবহার বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর সেই ব্যবহার হবে বৈপ্লবিক। বর্তমানের প্রচলিত সুপারকম্পিউটারের চেয়েও অনেকগুণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম কোয়ান্টাম কম্পিউটার। গুগল এক পরীক্ষায় দেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে প্রথাগত প্রসেসরের চেয়ে ১০ কোটি গুণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
এ কম্পিউটার কী কী পারে, সেই তালিকা বিশাল লম্বা। বিপুল ডেটা নিয়ে নিমেষে বিশ্লেষণের কাজ করতে পারবে এটি। রোগীদের জন্য নিত্যনতুন ওষুধ তৈরি, মৌলিক পদার্থ তৈরির গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, সামরিক খাতে অস্ত্র তৈরি থেকে শুরু করে যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণে সহায়তা, এমনকি নতুন নতুন স্বাদের খাবার সৃষ্টিতেও অবদান রাখতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
অবশ্য সবকিছুই এখনও সম্ভাবনার পর্যায়ে আছে। কারণ, বড় বড় টেক জায়ান্টরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে বিপুল অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করলেও, এখনও কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করতে পারেনি। যে পর্যায়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার শক্তিমত্তায় ক্ল্যাসিকাল কম্পিউটারকে পেরিয়ে যেতে পারবে, সেটিই হলো কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি। এর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন কিউবিটসের কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রয়োজন। যেখানে বর্তমান বিশ্বে তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রায় ১০০০ কিউবিটস মাত্র।
বোঝাই যাচ্ছে যে, যাত্রা বেশ দীর্ঘ। তবে সম্প্রতি একটি সুখবর জানিয়েছে কোয়ান্টিনিউয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতদিন গুগলের সিকামোর মেশিন কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জনের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু মাসখানেক আগে কোয়ান্টিনিউয়াম দাবি করেছে, তাদের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুগলের সিকামোরের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি কর্মনৈপুণ্য প্রদর্শনে সক্ষম। এখন যদিও এই দাবি নিয়ে পরীক্ষা‑নিরীক্ষা চলছে। তবে বোঝাই যাচ্ছে যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জগতেও আসতে চলেছে নতুন ঝড়!
সব মিলিয়ে বলাই যায় যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো বিশ্বের কম্পিউটারের জগতে আসতে চলেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একদিকে আসছে জেটা‑ক্লাস সুপারকম্পিউটার, তো অন্যদিকে চোখ রাঙাচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোন দেশ বা কোন প্রতিষ্ঠান সবার আগে এসব তৈরি করতে পারে, তাই এখন দেখার। মনে রাখতে হবে, যার হাতে সোনা ফলবে, আগামীর দুনিয়াটা হবে তারই!

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ